অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ
এই সেশন শেষে আপনি-
১. মানসিক স্বাস্থ্য, সমস্যা, রোগ এবং সেবা সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে জানবেন
২. এর ফলে ব্যক্তির জীবনে কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে ধারণা পাবেন
আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য, মানসিক রোগ ইত্যাদি বিষয়ে একদিকে যেমন রয়েছে সচেতনতার অভাব তেমনি অন্যদিকে রয়েছে অজ্ঞতা এবং অসংখ্য ভ্রান্ত ধারনা। প্রতিটি ব্যক্তিরই জীবনের কোন এক পর্যায়ে মানসিক সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তি বুঝতে পারেনা যে তার সমস্যা রয়েছে এবং সাহায্যের দরকার। যদি বুঝতে পারেও, জানেনা তার কি করা উচিত বা কোথায় গেলে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ব্যক্তি সংকোচবোধ করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে, কারন মানসিক সমস্যা বা রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনা এবং কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। একারণে মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগ বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা এবং সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরী।
কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা এবং বাস্তব সত্য জানাঃ
প্রচলিত ধারণাঃ
মানসিক অসুস্থতা মানে তুমি ‘পাগল’।
প্রবাস্তব ধারণাঃ
মানসিক অসুস্থতা হচ্ছে মানসিক রোগ। ‘পাগল’ ‘মাথা খারাপ’ ইত্যাদি আখ্যায়িত করার ফলে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরনের কষ্টের সৃষ্টি হয় এবং সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
প্রচলিত ধারণাঃ মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি নিজে থেকেই সুস্থ হতে পারে।
বাস্তব ধারণাঃ মানসিক অসুস্থতা কোন ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, তাই এর আরোগ্য লাভও ব্যক্তির নিজে থেকে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন যথোপযুক্ত চিকিৎসা।
বাস্তবধারণাঃ কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে, মানসিক অসুস্থতা ডায়াবেটিস রোগের মত আজীবন থাকতে পারে কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যক্তি সুন্দরভাবে নিজের জীবনকে পরিচালিত করতে পারে।
প্রচলিত ধারণাঃ মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি প্রায়ই আক্রমণাত্মক হয় ।
বাস্তব ধারণাঃ মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি আক্রমণ করার থেকে আক্রমণের শিকারই বেশী হয়। উপযুক্ত চিকিৎসা পেলে তাদের মধ্যে আক্রমণ করার সম্ভবনা সাধারন মানুষের থেকে বেশী হবে না।
প্রচলিতধারণাঃ শিশুরা মানসিক অসুস্থতায় ভোগেনা।
বাস্তব ধারণাঃ লক্ষ লক্ষ শিশুরা অবসাদ, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন।
প্রচলিত ধারণাঃ মানসিক অসুস্থতা আমার নিজের উপর প্রভাব ফেলে না।
বাস্তব ধারণাঃ যে কেউই মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে। যে কোন বয়স জাতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, আবহাওয়া অথবা পরিবারের কোন ইতিহাস না থাকলেও ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার কারণে ভোগান্তির শিকার ব্যক্তি সঠিক মানসিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। মানসিক সমস্যার বিষয়ে অসচেতনতা এবং কুসংস্কারের কারণে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপচিকিৎসার শিকার হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের তাবিজ, পীর-ফকির, জ¦ীন তাড়ানো বা অনেক ক্ষেত্রে স্ব-উদ্ভাবিত বা স্বপ্নে পাওয়া ঔষধের মাধ্যমে চলতে থাকে অপচিকিৎসা।
পরিণতিতে ঘটতে থাকে আরো অধিক মাত্রার মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন। পাশাপাশি আর্থিক অপচয় এবং ধোকাবাজির শিকার হয়ে ব্যক্তি আত্ম-বিশ^াস হারিয়ে ফেলে এবং দিনে দিনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।