অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ
এই সেশন শেষে আপনি জানতে পারবেন
১. মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কাদের প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
২. মানসিক সমস্যা এবং মানসিক রোগের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন
৩. জানার পরে আপনার করনীয় পদক্ষেপ কি হতে পারে তা অনুধাবণ করতে পারবেন
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কেন প্রয়োজন
বাংলাদেশের পূর্ণবয়সী মানুষের মধ্যে ১৬.১ ভাগের এবং ঢাকা ডিভিশনের শিশু- কিশোরদের মধ্যে শতকরা ১৮.৩৫ ভাগের মানসিক রোগ আছে। যারা সমাজের বঞ্চিত, ও অনগ্রসর শ্রেণীর, যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার বা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে তেমন শিশু- কিশোর ও বড়দের মধ্যে এই হার আরো বেশী হওয়াই স্বাভাবিক। মানসিক সমস্যা এবং মানসিক রোগ এটা যাদের আছে তাদের সবারই মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন।
মানসিক অসুস্থতার ফলে ব্যক্তির উপর অনেক প্রভাব পড়ে। ফলে ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, পেশাগত অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম বেশী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা কমে যায় এবং কাজ করার সক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু যথোপযুক্ত চিকিৎসার ফলে একজন মানসিক রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সুস্থ জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার জন্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মানসিক রোগ স¤পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।
মানসিক সমস্যার কারণসমূূহঃ
বিভিন্ন কারনে ব্যক্তির মধ্যে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন : জৈব রাসায়নিক উপাদানের প্রভাব, জীনের প্রভাব, শারীরিক গঠনগত দুর্বলতার প্রভাব, মস্তিষ্কের ক্ষতিজনিত কারন, আর্থসামাজিক কারণ ইত্যাদি। তবে গবেষকরা যেসব মনোসামাজিক বিভিন্ন উপাদানের উপর জোর দিয়েছেন, সেগুলি নিম্নরুপ:
- শৈশবকালীন বঞ্চনা
- কাছের কারো মৃত্যু বা তীব্র বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া, যেমন- আশ্রয়কেন্দ্রে বড় হওয়া
- অপর্যাপ্ত পিতৃ- মাতৃ স্নেহ
- আসামঞ্জস্য শিশু প্রতিপালন পদ্ধতি (কঠোর শাস্তি, অতিরিক্ত পশ্রয়দান ইত্যাদি)
- বাবা- মায়ের দাম্পত্য কলহ
- ভাইবোনের দ্বন্দ্ব ও কলহ
- শিশুর সঙ্গে বাবা- মার ত্রুটিপূর্ণ সম্পর্ক
- সামঞ্জস্যহীন সমবয়সী দল
- সঠিক নিয়মশৃঙ্খলা বা সঠিক নির্দেশনার অভাব
- ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণ, সমাজের অন্যদের সাথে মেশার সুযোগের অভাব এবং কোন দলের সাথে একাত্মতা অনুভবের অভাব।
- ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন
- ত্রুটিপূর্ণ সামাজিকীকরণ, সমাজের অন্যান্যদের সাথে মেশার সুযোগের অভাব এবং কোন দলের সাথে একাত্মতা অনুভবের অভাব ইত্যাদি।মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণঃ
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ সাধারনত ৪ রকমের হয়ে থাকে যথা:
১. জ্ঞানীয়
২. আবেগীয়
৩. শারীরবৃত্তীয়
৪. এবং আচরণগত
অতিরিক্ত অস্থিরতা, কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া, দুশ্চিন্তা, ঘুুমের সমস্যা, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া, অপরাধবোধ, নিজেকে ছোট মনে করা, হতাশ ভাব, বিষন্নতা, জীবনে ব্যর্থ মনে করা, আত্মহত্যার চিন্তা, মাথাব্যথা, বুকের মধ্যে চাপ অনুভাব করা, ক্ষুধামন্দা, দূর্বলতা, বুক ধরফর করা, নিশ্বাষ নিতে কষ্ট অনুভত হওয়া, হাত- পা কাপা ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাধারন লক্ষণ।
মানসিক রোগ ও লক্ষণ সমূহঃ
কারো মানসিক রোগ হয়েছে কিনা তা বুঝতে হলে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ করা দরকার:
- ব্যক্তির মধ্যে কতগুলো মানসিক সমস্যার লক্ষণ থাকবে
- এই লক্ষণগুলো কয়েকমাস বা তার বেশী সময় ধরে উপস্থিত থাকবে
- এই লক্ষণগুলোর মাত্রা যথেষ্ট তীব্র হবে
- মানসিক সমস্যার লক্ষণগুলোর কারনে ব্যক্তির জীবনযাত্রা ভীষণভাবে বিঘ্নিত হবে। যেমন- তার লেখাপড়া, ঘড়ে গৃহপালিত কাজ, পেশাগত কাজ, আন্তব্যক্তিতে সম্পর্ক, পারিবারিক জীবন, যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে।
- এই লক্ষণগুলো কোন শারীরিক বা নিউরোলজিক্যাল অসুখের কারনে কোন ঔষধের প্রভাবে বা কোন নেশাদ্রব্য বা কোন অ্যালকোহলের কারনে তৈরি হইনি।
উপরের বিষয়গুলোযদি কারো মধ্য থাকে তাহলে বলা যায় তার মানসিক রোগ হবার সম্ভাবনা আছে।
করনীয় পদক্ষেপ সমূহঃ
মানসিক রোগের লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা থাকাটা বিশেষ ভাবে দরকার।
মানসিক রোগ নির্ণয়ের জন্য মানসিক রোগের ডাক্তার বা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠিয়ে দিলে তারা নামসহ রোগ নির্ণয় করতে পারবেন।
মানসিক ভাবে অসুস্থ কাউকে পাওয়া গেলে নিজে প্রাথমিক পর্যায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যথাযথ বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফার করবেন। কোথায় রেফার করতে হবে বা পাঠাতে হবে তার একটি তালিকা সেশন-১২ তে পাবেন।
৩.১ -হ্যান্ডআউট – কিছু সাধারন মানসিক অসুস্থতাঃ
বিষন্নতা ডিসওর্ডার/বৈকল্য
এটি যেকোন মানসিক অসুস্থতার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত অসুস্থতা। যে কোন মানুষই জীবনের যে কোন সময় এই বিষন্নতায় ভুগতে পারে। কিন্তু মানসিক রোগ হিসেবে বিষন্নতাকে তখনই ধরবো যখন তাদের মধ্যে মন খারাপ, দ্যুঃখবোধ বা শূন্যতা বোধ থাকে। তাদের যে ধরনের কাজে পূর্বে আগ্রহ কাজ করত সে ধরনের আগ্রহ না থাকা। যে কোন কাজে শক্তি হারিয়ে ফেলা, মনোযোগ ধরে রাখতে, আলোচনা চালিয়ে যেতে অথবা সহজ কোন সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়। এর সাথে তাদের মধ্যে আত্যহতার চিন্তা বা উদ্দেগ দেখা যেতে পারে। এই ধরণের সমস্যা যখন দীর্ঘদিন কারো মধ্যে দেখা যায় তখন তাকে বিষন্নতা বলে। বিষন্নতার লক্ষনগুলো দুর করার জন্যঔষধ এবং সাইকোথেরাপি দুইটি বিষয়টি কার্যকর। কারো কারো ক্ষেত্রে বিষন্নতার লক্ষনগুলো কিছুদিন ফিরে আসতে পারে, সেক্ষেত্রে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা জরুরী।
উদ্বিগ্নতা ডিসওর্ডার/বৈকল্য
উদ্বিগ্নতার মধ্যে অনেকগুলো অসুস্থতা রয়েছে যাদের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে অস্বাভাবিক বা অনুপযোগী উদ্দি¦গ্নতা । প্রতিটি মানুষই উদ্দি¦গ্নতা বোধ করে। হঠাৎ কোন গন্ডগোলের আওয়াজ পাওয়ার পর ব্যক্তির সাধারনত হৃৎপৃন্ডের স্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাষ-প্রশ্বাষ বেড়ে যায়, মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায় এবং শব্দের উৎসের দিকে মনোযোগ দেয়। এটি মানুষের দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর অর্থ হচ্ছে শরীর নিজে নিজে যুদ্ধ করার জন্য বা বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে পালানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই লক্ষণগুলোই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই এগুলো দেখা যায়। অন্যকথায় বলা যায় যে, যখন কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই মানুষের মধ্যে হৃৎপৃন্ডের স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাষ-প্রশ্বাষ বেড়ে যাওয়া, মাংসপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা যায় তখন তাকে উদ্দি¦গ্নতা বলে। উদ্দি¦গ্নতার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতা রয়েছে, তাদের কিছু বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলোঃ
১.জিএডি (জেনারেলাইজড এ্যাংজাইটি ডিসওর্ডার)/সাধারনত উদ্দি¦গ্নতা বৈকল্যঃ
সাধারন উদ্দি¦গ্নতা বৈকল্যতে ব্যক্তি ক্রমাগতভাবে অস্থিরতা অনুভব করা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, মাথা ঘোরানো, অল্পতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, কোন কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া এবং অতিরিক্ত দ:ুশ্চিন্তা ইত্যাদি অনুভব করা। এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট বা সুনির্দিষ্ট নয় অথবা বাস্তবিক জীবনের বিপদ মোকাবেলার চেয়ে বেশি পরিমানে হয়। এই অবস্থা একটানা প্রায় ছয় মাসের মত স্থায়ী হয়। ব্যক্তির জীবনের বিপদমুক্ত হয়ে গেলেও অন্য কোন বিষয় এসে তাকে একই ধরনের অনুভুতি তৈরী করে। এই অবস্থা নিয়ন্ত্রন করা ব্যক্তির জন্য অসম্ভব এবং এটি ব্যক্তির বাড়িতে, কাজে বা সামাজিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজের সম্পর্কে খুব নিম্ন ধারণা পোষণ করে এবং সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঔষধ এবং সাইকোথেরাপীর কার্যকারীতা দেখা গেছে।
২.সামাজিক ভীতিঃ
সামাজিক ভীতি একটি উদ্দি¦গ্নতা বৈকল্য যাতে ব্যক্তির লজ্জিত, অপমানিত, তাচ্ছিল্যের পাত্র ইত্যাদি হওয়ার জন্য বেশী পরিমানে অস্বস্তি থাকে। এমনকি যখন তারা এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার পূর্বে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে অস্বস্থি শুরু হয় বিষয়টি নিয়ে এবং ঐ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে অযথা বিলম্ব করে। এই ধরনের ব্যক্তিরা বেশী অসুবিধায় পড়ে সবার সামনে কথা বলতে গিয়ে, অন্য কারো সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলে, কতৃপক্ষস্থানীয় কারো সাথে কথা বলতে গেলে, অনেকের সামনে খেতে গেলে এবং গনশৌচাগার ব্যবহার করতে গেলে। এই রোগটিকে অনেক সময় লাজুকতা বলে ভুল ধারনা করা হয়। লাজুক ব্যক্তিরা অন্যদের সামনে অস্বস্তি বোধ করে কিন্তু তাদের কোন সামাজিক পরিবেশে অত্যন্ত উদ্বিগ্নতা আসবেনা এবং তারা সাধারনত এই ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে নিজের অস্বস্থি কমানোর চেষ্টা করবে না। অন্যভাবে সামাজিকভাবে ভীত ব্যক্তি সবসময় লাজুক নয় বরং তারা কিছু মানুষের সামনে বেশীরভাগ সময় পুরোপুরি সহজ হতে পারে। সামাজিকভাবে ভীত ব্যক্তিরা সাধারনত দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কের বিষয়কে এড়িয়ে চলে এবং এটি এত বেশী মাত্রায় হয়ে পড়ে যে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন এতে বাধাগ্রস্থ হয়। এটি তাদের জীবনযাপন, জীবিকা, সামাজিক যোগাযোগ সব কিছুতে বাধার সৃষ্টি করে। এই ধরনের অসুস্থতার ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি বা মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার ভালো সুফল পাওয়া গেছে।
৩.মুক্তস্থানাতঙ্ক/ ভিড়ের প্রতি ভীতি
এই ধরনের উদ্বিগ্নতা বৈকল্য হলে ব্যক্তি ঐ ধরনের পরিস্থিতিতে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে যেখান থেকে সে সহজে বের হতে পারবে না। এই রোগটি খুব তীব্র কারণ এই রোগীরা প্রায়ই প্যানিক অ্যাটাক বা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং এরা সাধারণভাবেই তাদের ভয়ের স্থান এবং বিষয় এড়িয়ে চলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বাসায় একা থাকতে, বাহিরে একা একা যেতে, ভিড়ের মধ্যে যেতে, যানবাহনে ভ্রমণ করতে, লিফ্ট বা ব্রিজে উঠতে ভয় পায়। ভীড়ের প্রতি ভীত ব্যক্তিরা সাধারণত ভিড়ের স্থান যেমন রাস্তা, জনসমাগম, দোকান, চার্চ, মেলা, সিনেমা হলে ইত্যাদি জায়গা এড়িয়ে চলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরপর কয়েকবার কোন যোগসূত্র ছাড়াই প্যানিক অ্যাটাক হয় এবং কোন বিষয়টি এটির কারণ তা ধারণা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং যোগসুত্র ছাড়া প্যানিক অ্যাটাক ভবিষ্যতে এরূপ হবার ভয় তৈরি করে এবং এমন পরিস্থিতির প্রতি ভয় তৈরি করে যেখানে এটি আবার হতে পারে। এই ভিড়ের প্রতি ভীতি এত প্রকট হতে পারে যে ব্যক্তি তার নিজের বাসার বাহিরে কোথাও বের হতে পারে না।
৪.শূচিবায়ূঃ
এটি একটি উদ্বিগ্নতা বৈকল্য। এই অসুস্থতার মূল লক্ষণ হচ্ছে ক্রমাগত বদ্ধ ধারণা,প্রায়ই অযৌক্তিক ধারণা, অনিয়ন্ত্রিত ধারণা, ভয়,দুশ্চিন্তা এবং এমন কোন কাজ ক্রমাগত করে যাওয়া যা এই অস্বস্তি থেকে সাময়িক পরিত্রান ঘটায়। এই রোগের একটি খুব পরিচিত উদাহরণ হচ্ছে একজন ব্যক্তির স্থায়ী, ক্রমাগত এবং অনিয়ন্ত্রিত ধারণা হচ্ছে যে সে অপরিচ্ছন্ন, রোগ বাহিত, নাপাক, অশূচি। এবং এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তিনি প্রতিনিয়ত হাত ধুতে থাকে এবং প্রতিবার ঐ চিন্তা থেকে সাময়িক মুক্তি পায়। এই রোগে অসুস্থ ব্যক্তির সমস্যা এত প্রকট হয়ে পড়ে যে এটি তার দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয়, এক কাজ বারবার করতে হয়, কোন কিছু বারবার চেক করতে হয় এবং এটি তার জন্য অত্যান্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে পড়ে। শুচিবায়ু সারার জন্য ঔষধ সেবন করতে হয় তবে তাদের আচরণ, চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কিছু কৌশল, তাদের দুশ্চিন্তার সাথে মোকাবিলা করা এবং এই চিন্তার পিছনে লুকানো বিষয় গুলো খুঁজে বের করতে সাইকোথেরাপি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
স্কিজোফ্রেনিয়া
সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে কৈশোরের শুরু থেকে প্রাক প্রাপ্তবয়স্ক সময়ে এবং নারীদের ক্ষেত্রে আরো কিছুবছর পর কোন দুশ্চিন্তাাগ্রস্থ সময়ের ফলাফল হিসেবে এই অসুস্থতা দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং দৃষ্টিবিভ্রম,শ্রুতিবিভ্রম, অগোছালো আচরণ বা কথাবার্তা দেখা যায়। এবং এটি বাড়তে বাড়তে একটা সময় নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়া, অনুভূতির সাথে আচরণের মিল না থাকা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এই ধরনের রোগীদের জন্য অতিসত্তর ঔষধ শুরু করাটা জরুরী।
পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি)
যে সমস্ত সারভাইবার অপহরণ, পাচার, যৌন নির্যাতন অথবা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় তাদের মধ্যে বিভিন্ন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চঞঝউ হচ্ছে তেমনি একটি মানসিক অসুস্থতা যার মূলে ব্যক্তির ভয়াবহ নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সমূহ কাজ করে । চঞঝউ আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে ঋষধংয নধপশ, দুঃস্বপ্ন, দুশ্চিন্তা দেখা দেয় সেই সাথে ব্যক্তির এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পূনঃপুনিক চিন্তার ওপর ব্যক্তির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই ধরনের উপসর্গ সময়ের সাথে সাথে কমে আসতে পারে যদি যথাযথ মানসিক সেবা নিশ্চিত করা যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক মাস এমনকি বেশ কিছু বছর ধরে ঐ চিন্তা, দুঃস্বপ্ন ও অতীতের ঘটনা পূনঃ অনুভব করতে থাকে।
চঞঝউ মহিলাদের মধ্যে পুরুষের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ আকারে বিদ্যমান। এটি যেকোন বয়সের ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে।চঞঝউআক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে হতাশা, ড্রাগ/মাদকের নেশা, অন্যান্য উদ্দে¦গজনিত রোগ সহজে সংক্রমিত হতে পারে।
কোন ব্যক্তিকে চঞঝউআক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য তার মাঝে কিছু উপসর্গ চিহ্নিত করতে হবে। এই উপসর্গগুলো অন্তত এক মাস বা তার অধিকসময় স্থায়ী হলে এবং তা ব্যক্তিরস্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে চঞঝউ আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এই রোগের চিহ্নগুলো নিম্নরুপঃ
- ঘটনাটি মনে পড়লে ব্যাক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিক্রিয়া করে এবং সাধারণত দুঃস্বপ্ন, মনখারাপ, করা চিন্তা অথবা ঋষধংয নধপশ এর মধ্য দিয়ে ব্যক্তিরই বেদনাদায়ক/ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা মনে পড়ে।
- যে সমস্ত ঘটনা, অবস্থা, কাজ ও পারিপার্শ্বিকতা ব্যক্তির ঐ নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে মনে করিয়ে দেয় যেগুলো থেকে দূরে থাকতে চায়। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে পড়ে এবং পূর্বস্মৃতি মনে করতে পারে না।
- প্রাত্যহিক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং নিঃসঙ্গবোধ করে চঞঝউ আক্রান্ত ব্যাক্তি সাধারণত ভবিষ্যত নিয়ে ভালো কিছুর সম্ভাবনা স¤পর্কে ভাবতে পারেনা।
- চঞঝউ আক্রান্ত ব্যাক্তি সবসময় অতি উদ্বেগগ্রস্থ থাকতে পারে। তাদের কেবলি মনে হয় যে, দুর্ঘটনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য সর্বদা সচেতন থাকা প্রয়োজন। ফলে ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটমিট করা, মনোযোগের অভাব, অতিমাত্রায় আহার করা এবং দ্রুত রোগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো ইত্যাদি তাদের মধ্যে দেখা দেয়। মাথার যন্ত্রণা, হজমের গন্ডগোল, ঘুমের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধের অভাব, বুকের ব্যথা ইত্যাদি এদের ক্ষেত্রে খুবই বেশি দেখা যায়।
- ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাথে সাথে খুব দ্রুত ব্যক্তিকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনার সুযোগ করে দিলে রোগ উপসর্গগুলো কিছুটা কমাতে সহায়তা করে।
৩.২ঃ হ্যান্ডআউট – বিভিন্ন বয়সে মানসিক সমস্যা
মানসিক সমস্যা যেমন বিভিন্ন ধরনের হয় তেমনি বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী বা বয়স ভেদে সমস্যার ধরণও বিভিন্ন হয়ে থাকে।
বয়স ভেদে মানসিক সমস্যাকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকেঃ
(১) শিশুদের সমস্যা
(২) প্রাপ্তবয়স্কদের সমস্যা
(৩) বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যা
১. শিশুদের মানসিক সমস্যাকে আবার বয়সের ক্রম অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। জন্মের পর থেকে ১২ এবং ১৩ থেকে ১৮।
আসলে শিশুদের ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা না বলে আবেগীয় আচরনগত সমস্যা বললে ভালভাবে বোঝা সম্ভব হয়। আচরনগত সমস্যার মধ্যে আছে অতিরিক্ত চপলতা, অত্যধিক জিদ করা, অবাধ্যতা, অপরাধ প্রবনতা, চুরি করা, খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করা, অন্যকে মারধর করা, বিছানায় প্রসাব করা রাগ, তেতলামী, অতিরিক্ত ভয় বা নার্ভাসনেস, বিষন্নতা, স্কুলে না যাওয়া বা স্কুল ভীতি, পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্যা, ব্যথা (মাথা ব্যথা বা পেট ব্যথা) অটিসম ইত্যাদি।
২. প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫/৬০ এর মধ্যে তাদের ক্ষেত্রে যেসব মানসিক সমস্যা দেখা যেতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ঃ অতিরিক্ত ভয় এবং দুঃশ্চিন্তা, বিষন্নতা, সামাজিক ভীতি, শুচিবায়ু বা অতিরিক্ত খুতখুতে স্বভাব, আন্তঃব্যক্তিক অর্থাৎ অন্যান্যদের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে অসুবিধা বা অপারগতা, আত্যহত্যার প্রবনতা, মাদকাসক্তি, মানসিক কারণে যৌন সমস্যা, ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে মাথা ব্যথা বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা
৩. বয়স্ক ব্যক্তিদের সমস্যায় দেখা হয়, যারা ৬০ বছরের উপরে যাদের বয়স এবং তারা যেসকল মানসিক সমস্যা আক্রান্ত বা সম্মুখীন হয়, যেমন- নারীদের মেনোপজকে ঘিরে মানসিক অবস্থা, ডিমেনসিয়া, আলঝেইমার-সহ অন্যনা মানসিক রোগ। এছাড়াও, কাজে অবসর, বাড়ীতে একা থাকা, সংগীর মুত্যু, দেখাশোনার কেউ না থাকা, ওষুধ বা খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা না থাকা-সহ নানাবিধ পারিবারিক বা সামাজিক বিষয়ে ব্যক্তি মানসিক সমস্যায় পড়ে থাকেন, যার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে।