অধিবেশন ৫: কিভাবে সেবা গ্রহীতার সংগে শ্রদ্ধা, বিশ্বস্থ এবং আস্থা স্থাপন করা যেতে পারে এবং কেন

অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ

এই সেশনের শেষে আপনি-
১. প্রত্যেকটি কাজ বা আচরনের পিছনে ব্যক্তির কি বিশ্বাস বা মূল্যবোধ কাজ করে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন
২. পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা কিভা্েব প্রভাব বিস্তার করে তা জানতে পারবেন
৩. সেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে বিবিশ্বাস এবং আস্থার স¤পর্ক তৈরি করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পারবেন

ধরুন আপনি একজন অন্ধ ব্যক্তি। আপনার চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে অন্য একজন ব্যক্তি আপনাকে গাইড করে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাচ্ছে এবং বিভিন্ন বস্তু ¯পর্শ করাচ্ছে। এরপর একটু ভাবুন তো, “সেবা গ্রহনকারী/ অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে আপনার কেমন লাগতে পারে” ?

ঠিক একই ভাবে চিন্তা করুন “ গাইড বা সেবা প্রদানকারী হিসেবে কি কি অনুভ‚তি তৈরি হতে পারে”?

সম্ভাব্য অনুভূতিঃ

গাইড বা সাহায্যকারী হিসেবে দু:শ্চিন্তা, অস্থিরতা, ভয়, শক্তিশালী, দায়িত্বশীল, ভারি ভারি, বিরক্ত ইত্যাদি।
সেবা গ্রহনকারী/ অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে- অনিরাপত্তা, অনিশ্চয়তা, ভয়, রাগ,নির্ভরশীলতা,অসহায়,আনন্দ ইত্যাদি।

এখানে আমরা বুঝতে পারছি যে অনেক সময়ই সাহায্যপ্রার্থী সাহায্যকারীর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারে না। তাদের মনে এক ধরনের অজানা ভয় এবং আশঙ্কা কাজ করে। একই ভাবে সাহায্যকারী যথেষ্ট সচেতন থাকার পরও এক ধরনের দু:শ্চিন্তা কাজ করতে পারে সেবা গ্রহীতার আস্থা অর্জন নিয়ে। আস্থার স¤পর্ক তৈরি করার জন্য সেবা প্রদানকারীর সেবা গ্রহীতার অনুভ‚তি বুঝতে হবে।

সেবা গ্রহীতার প্রতি সম্মানের মনোভাব দেখানো কিভাবে সম্ভব :

    • সেবা গ্রহীতার এর ব্যাপারে সমালোচনামূলক মনোভাব সম্পূর্ণ বর্জন করে তাকে সহজভাবে নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দিতে হবে
    • তার সাথে উৎসাহী হয়ে কথা বলতে হবে
    • তাকে ঠিকভাবে বোঝার জন্য মনোযোগী হতে হবে
    • তাকে তার কোন প্রচেষ্টার জন্য বা কোন অর্জনের জন্য প্রশংসা করতে হবে
    • সেবা গ্রহীতার এর সাথে সহজ- সরল এবং স্বতস্ফুর্ত আচরন করতে হবে
    • সেবা গ্রহীতার, যে নিজের সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা রয়েছে সে ব্যাপারে বিশ্বাস রাখতে হবে
      শ্রদ্ধা হচ্ছে-
    • একজন মানুষের ভিতরের মর্যাদাকে স্বীকার করা
    • প্রত্যেকটি মানুষই অন্য মানুষ থেকে আলাদা-তা বিশ্বাস করা
    • মানতে হবে, প্রত্যেক মানুষের পছন্দ করার অধিকার রয়েছে এবং তার নিজের সমস্যা সমাধানের সেই যোগ্যতা ও ক্ষমতা রয়েছে।

    সেবা দান প্রক্রিয়ায় পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহঃ

    সেবা গ্রহীতার প্রতি অকৃত্রিম (Genuine) হওয়া কিভাবে সম্ভবঃ

    • নিজেকে পেশাগত আসন থেকে নেমে সেবা গ্রহীতার যে স্তরে রয়েছেন সেখানে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে হবে
    • সাহায্যকারী যা বলছেন তা যেন সেবা গ্রহীতার এর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়, সেদিকে খেয়াল করতে হবে
    • সেবা গ্রহীতার সাথে যতটা সম্ভব খোলামেলা সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। শুধু কৌশল ((Technique) এর কথা চিন্তা না করে মানুষটির উপর মনোযোগ দিতে হবে। স্বতঃস্ফুর্তভাবে মুক্ত আলোচনা ক্লায়েন্টকে সহজ হতে সাহায্য করবে।
    • সেবা গ্রহীতার এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, “আমার ভেতরে কি এমন কিছু ঘটছে, যা আমাকে সেবা গ্রহীতার এর প্রতি আগ্রহী করে তুলছে না”? সেবা গ্রহীতার এর মধ্যে বিরক্তি বা রাগের অনুভুতি লক্ষনীয় থাকে তাহলেও বোঝার চেষ্টা করতে হবে তার এই অনুভুতিগুলোর পেছনে কি কারন থাকতে পারে। এটা কি সম্পূর্ণভাবে সেবা গ্রহীতার এর নিজস্ব ব্যাপার নাকি দু’জনের মধ্যে এমন কিছু কথা হয়েছে যার ফলে তার মধ্যে এধরনের অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট হতে হবে।

    সেবা গ্রহীতার সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিভাবে সুস্পষ্টতা ও প্রাসঙ্গিকতা (Concreteness) প্রয়োগ করা যায়ঃ

    • সেবা গ্রহীতার এর কথাবার্তা যদি অস্পষ্ট মনে হয় তাহলে সাহায্যকারীকে চেষ্টা করতে হবে সেগুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তার সামনে তুলে ধরতে।
    • সেবা গ্রহীতার যা বলছে, সেটা তার সমস্যার সাথে কতটা প্রাসঙ্গিক সেটা জানতে হবে। সাহায্যকারীকে চেষ্টা করতে হবে আলোচনার বিষয়বস্তুটি যেন যথাসম্ভব সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হয় সেই চেষ্টা করা। যদি মনে হয় সাহায্যপ্রার্থীর কথা ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না, তাহলে প্রয়োজনে তাকে কথার মাঝে থামিয়ে ব্যাপারটি আরো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করতে হবে।
    • কোন বিশেষ ঘটনার উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করার জন্য সেবা গ্রহীতাকে বলা যাবে। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল করতে হবে সেটা যেন সরাসরি প্রশ্ন না হয়। কোন বিষয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে যখন সাহায্যপ্রার্থী অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন তখন তাকে উপস্থাপনে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বিষয়টি গভীরে যাবার জন্য তাকে সাহায্য করতে হবে।
    • আলোচনার বিষয়বস্তু প্রাসঙ্গিক হচ্ছে কি না সেটা বোঝার জন্য সাহায্যকারী নিজের অতীত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করবেন।

    এই প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আপনি সেবা গ্রহীতার কথা কতটা বিশ্বাসের সাথে রক্ষা করতে পারেন তা বুঝতে পারবেনঃ

    আমাদের সেবা গ্রহীতার সব কথা সব সময় গোপন রাখতে হবে। কিন্তু যদি দেখেন সেবা গ্রহীতা নিজের জীবনের বা অন্যের জীবনের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন তখন গোপনীয়তা ভেঙ্গে বিষয়টি তার কাছের মানুষকে জানাতে হবে। সেবা গ্রহীতার কথা সবসময়ই বিশ্বাস করতে হবে। সেবা গ্রহীতাকে নিয়ে আপনার নিজস্ব কোন অনুভূতি যদি তৈরী হয় তা হলে আপনার সুপারভাইজারের সাথে গোপনীয়তা বজায় রেখে আলোচনা করতে পারেন। সব সময় মনে রাখতে হবে, আপনার বিশ্বাস, মনোভাব, মূল্যবোধ এবং অকৃতিমতা নিয়ে সেবা গ্রহীতার সাথে আস্থার স¤পর্ক তৈরী করা, যা সেবা প্রদানকারী হিসেবে আপনার মূল দায়িত্ব।

error: Content is protected !!