অধিবেশন ৮: সেবা গ্রহীতার কথা শোনার পাশাপাশি যথাযথ ভাবে সাড়া দেওয়া

অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ

এই সেশনের মাধ্যমে আপনি-

১. প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কি এবং এর প্রকৃতি স¤পর্কে জানতে পারবেন
২. নিজেদের এবং অন্যের প্রতিক্রিয়ার ধরন চিহ্নিত করতে পারবেন
৩. স্বাভাবিকভাবে আমাদের মধ্যকার যে সকল প্রতিক্রিয়া করার প্রবণতা চলে আসে তা বুঝতে শেখা এবং প্রতিক্রয়া করতে লক্ষণীয় দিক স¤পর্কে সচেতনতা তৈরি করা

সাড়া দেওয়াঃ

সেবাগ্রহীতার সাহায্যের জন্য যখন আসবেন, তখন সেবাপ্রদানকারীর তার কথায় সাড়া দেওয়া, কমিউিনিকেশন বা যোগাযোগ পদ্ধতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। যথাযথ সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা বোঝেন যে, তার কথা শোনা হয়েছে এবং বোঝা হয়েছে, ফলে সে আরও কথা বলতে উৎসাহী হয়।

সেবাপ্রদানকারীর প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যেমন, মুখের চেহারা দিয়ে তা প্রকাশ করা যায়, উত্তর দেবার সময় গলার স্বর (চড়া বা নরম) দিয়ে প্রতিক্রিয়া বোঝানো যায়, অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটে, তাছাড়া কথা বলে তো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা যায়ই।

প্রতিক্রিয়া, ঠিক কি রকমের হবে সেটা নির্ভর করে প্রতিক্রিয়াকারী বা সেবাপ্রদানকারীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্দেশ্যের ওপর। প্রধানতঃ পাঁচ রকমের (EIPSU) প্রতিক্রিয়া হতে পারে;

১. মূল্যায়নসূচক উক্তি (EVALUATIVE): ঠিক/ ভুল, ভাল/ মন্দ ইত্যাদির বিচার করা।
২. বিশ্লেষণমূলক উক্তি (INTERPRETATIVE): কোন বক্তব্য বা সমস্যাার একটা মানে বিশ্লেষণ করা
৩. প্রশ্নমূলক উক্তি (PROBING): যার দ্বারা সূত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়ঃ আরও কিছু জানতে চাওয়া, সেবাগ্রহীতাকে নিজের কথা শুনতে সাহায্য করা।
৪. ভরসামূলক উক্তি (SUPPORTIVE): ভরসা যোগানো
৫. বোধগম্য উক্তি হচ্ছে তা বোঝানো (UNDERSTANDING): সেবাগ্রহীতার থেকে সুনিশ্চিত করা যে তার বক্তব্য সঠিক ভাবে বোঝা হয়েছে।

বোধগম্যসূচক উক্তি সবচেয়ে বেশী সাহায্য করে। ভরসামূলক উক্তি করার সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে তা নির্ভরতা বাড়িয়ে না তোলে, প্রশ্নমূলক উক্তি সীমা রেখে করা উচিত, যাতে সেবাগ্রহীতা খেই না হারিয়ে ফেলে। বিশ্লেষণমূলক উক্তি খুবই বিপদের কারণ এর দ্বারা কোনো বক্তব্যের ভুল বিশ্লেষণ হয়ে যেতে পারে। মূল্যায়নসূচক উক্তি একেবারেই সাহায্য করে না, বরং অসুবিধা বাড়িয়ে তোলে।

নিচের ৮.১-হ্যান্ডআউটতে ৬ টি পরিস্থিতি আছে। প্রত্যেকটি পরিস্থিতির বিপরীতে ৫টি সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া দেওয়া আছে। এবার আপনার কাজ হবে, ঐ ৬ টি পরিস্থিতিতে যে ৫ টি করে প্রতিক্রিয়া দেওয়া আছে তা পড়া এবং কোনটা কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া তা চিহ্নিত করা। আশা করি, কাজটি করে আপনি বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।

যথাযথ ও আদর্শভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ৩ টি উপাদান খুবই জরুরীঃ-

১. বিষয় (CONTENT): ঠিক ঠিক কথার ব্যবহার করা। মুখে না বলে আকারে, ইঙ্গিতে বোঝানো বক্তব্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া।
২. গভীরতা (DEPTH): বক্তব্যের গভীরতা/ ছাড়া ছাড়া ভাব খেয়াল করা।
৩. অর্থ (MEANING): সাড়া দেওয়ার সময়- সাহায্যপ্রার্থীর বক্তব্যর অর্থ ও বিষয় হ্রাস পেলে বা নতুন অর্থ যোগ হলে চলবে না।

এখন যদি আমরা নিজেদের এবং আমাদের চারপাশের ঘনিষ্ঠ পরিচিত লোকদের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে অন্যে কি বলছে তার ওপর বেশীরভাগ সময়ই আমাদের বিচারমূলক প্রতিক্রিয়া হয়, নয়তো সেই বক্তব্যে আমরা আরো অন্য অর্থ যোগ করি। প্রশ্ন আমরা সাধারনত কম করি, অন্যের অনুভুতির প্রতি সংবেদনশীল না হয়েই মন্তব্য করি বা উপদেশ দেই। সাহায্যকারী হিসেবে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া সাহায্যপ্রার্থীকে মোটেই সাহায্য করবে না তা কমানো দরকার, যদিও আমরা সম্পূর্ণ ভাবে এ ধরণের প্রতিক্রিয়াগুলো বাদ দিতে পারিনা। আমরা যদি নিজেদের কে সাহায্যপ্রার্থীর জায়গায় বসাতে পারি, এবং যদি সাহায্যপ্রার্থীর অনুভুতিকে অর্থাৎ তার কি হচ্ছে বুঝতে পারি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে যথাসময়ে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া তার পক্ষে উপকারী। সহানুভুতিসম্পন্ন প্রতিক্রিয়া একটি ভালো সাহায্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি হতে পারে।

৮.১-হ্যান্ডআউট

নিচের ৬টি বক্তব্য পড়ুন। এই বক্তব্য গুলির সাহায্যে একজন মানুষ তার মনের উদ্বেগ ও সমস্যার কথা অপর একজনের কাছে প্রকাশ করেছে। প্রত্যেকটি বক্তব্য’র ৫টী করে উত্তর দেওয়া আছে। যদি বক্তাকে তার সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সাহায্য করতে চান এবং তার সঙ্গে একটি স¤পর্ক গড়ে তুলতে চান, তাহলে এই উত্তরগুলির মধ্যে কোনটি আপনি বেছে নেবেন তাতে টিক চিহ্ন প্রদান করুন।

১ । জনৈক ছেলের বক্তব্যঃ
আমি ক্রমশঃ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি। কারো সাথে মিশেতে পারি না। সব সময় দুশ্চিন্তা হয়। হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরি। মাথা যন্ত্রণা করে। একটা সময় ছিলো যখন আমি সবার সাথে মিশতে পারতাম।
উত্তরঃ
ক) তোমার মধ্যে একটা ভীতি তৈরী হয়েছে- যার জন্য তুমি সবার সাথে মিশতে পারছ না।
খ) আমাকে আরো একটু বুঝিয়ে বল। কবে থেকে এটা শুরু হয়েছে।
গ) তুমি আজকাল আগের মতো কওে মিশতে পার না বলে, তোমার এত দুঃশ্চিন্তা হয়, হতাশ লাগে।
ঘ) যখন লোকজনের সাথে থাকবে, তখন নিজেকে গুটিয়ে নেবে না।
ঙ) দেখ, প্রত্যেকের জীবনেই কখনো না কখনো এ রকম একটা সময় আসে। আমার বিশ্বাস তুমি এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

২। জনৈকা মেয়ের বক্তব্যঃ
বিয়ে করার জন্য আমার মা-বাবা আমাকে জোর করেছেন। আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। আমি এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুতই নই। আমি আরও পড়াশুনা করতে চাই। আমাকে যদি ওঁরা জোর কওে এবং বিয়ে করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করেন তাহলে বাড়ী থেকে পালিয়ে যাব।

উত্তরঃ
ক) তুমি কিছু চিন্ত করো না। আমি তোমার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলব যাতে তাঁরা আর তোমাকে এখনই বিয়ের ব্যাপারে জোর না করেন- এবং তোমাকে আরও লেখাপড়া করার সুযোগ দেন।
খ) তোমার মা-বাবা কি এখনই তোমার বিয়ে দিতে চান? তোমার নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
গ) তোমার যেহেতু মনে হচ্ছে তোমার মা-বাবা বড্ড বেশী কর্তৃত্ত্বপরায়ণ, সেইজন্যই তোমার মন বিদ্রোহ করে উঠেছে। আর তাই তুমি বিয়ে করতে চাইছো না, আরও পড়াশুনা করতে চাইছ।
ঘ) মা-বাবার কথা শোনার জন্য তুমি যেমন একদিকে উদ্বিগ্ন বোধ করছো এবং তোমার মনে একটা অপরাধবোধ জাগছে, অন্যদিকে আবার তুমি সত্যিই এখনই বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নও। তুমি বুঝতে পারছ না তোমার এখন কি করা উচিত।
ঙ) তোমার মা-বাবা যাকরছেন আসলে তা তোমার ভালর জন্যই করছেন। তোমার মতন লক্ষ্মী মেয়েরা বাবার কথাই শোনে, বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় না।

৩। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র/ ছাত্রীর বক্তব্যঃ
আমার কি যে হচ্ছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি অন্য সকলের মতো যথেষ্ট পড়াশুনা করি, কিন্তু আমি কিছুতেই ভালো নম্বর পাই না। আমার সমস্ত চেষ্টাই জলে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি না আমি আর কি করব।

উত্তরঃ
ক) যে সমস্ত বিষয়ে অন্যদের চেয়ে তোমার বেশী যোগ্যতা আছে, সে সমস্ত বিষয়ে তুমি ভাবছো না।
খ) তোমার কি ধরনের পড়াশুনার অভ্যাস?
গ) আজকাল পাঠ্যসূচী সত্যিই বেশ কঠিন। কোন বিষয়গুলি তোমার কঠিন লাগে তুমি যদি আমাকে জানাও তাহলে আমি তোমায় কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারি।
ঘ) তুমি যতই চেষ্টা করোনা কেন, পূর্ন মনোযোগ যদি না দিতে পার তাহলে কোনদিনই তুমি কৃতকার্য হতে পারবে না।
ঙ) পড়াশুনার সঙ্গে তুমি ঠিকমতো তাল রেখে চলতে পারছো না বলে নিশ্চয়ই তুমি চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন বোধ করছ। তুমি যে চেষ্টা করছ না তা কিন্তু নয়, আসলে তুমি তোমার পরিশ্রমের ঠিক মতন ফল পাচ্ছো না।

৪। জনৈক মায়ের বক্তব্যঃ
আমার মেয়ের ব্যাপারে আমার দারুন একটা হতাশা এবং রাগ হচ্ছে। ও খুবই বুদ্ধিমতি সুক্ষ্ম অনুভ’তিস¤পন্ন, কিন্তু ওর চরিত্রের এমন কতোগুলো দিক আছে যার জন্য আমি এমন খিটখিটে আর উত্তেজিত হয়ে পড়েছি যে অনেক সময়ই নিজেকে ঠিক সামাল দিতে পারি না।

উত্তরঃ
ক) কম বয়সী মেয়েরা সাধারণত এরকমই হয়ে থাকে। তাদের ঠিক মত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় এবং নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দিতে হয়।
খ) আমি নিজে মা হয়ে বুঝতে পারছি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিশেষ করে মেয়েদের সঙ্গে আচরণ করা কত শক্ত কাজ। কিছুদিন বাদে অবশ্য মেয়েরা খুবই লক্ষ্মী হয়ে যায়। তোমার এই যে অভিজ্ঞতা এটা নিতান্তই একটা সাময়িক ব্যাপারও হতে পারে।
গ) তোমার মেয়ের ব্যবহার হয়ত সত্যিই হতাশাজনক। আসলে তুমি হয়তো যা জানতে চাইছো তা হচ্ছে-কি করে আমি তাকে সাহায্য করতে পারি, নিজেকেই বা আমি কি করে সামাল দেব, বিশেষ করে মেয়ের স¤পর্কের ব্যপারে ।
ঘ) তুমি কি কখনও তোমার মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছ?
ঙ) হয়তো কলেজে গিয়ে তোমার মেয়ে কোন কুসংসর্গে পড়েছে। আর তার জন্যই তার ব্যবহারগুলো এ রকম হচ্ছে।

৫। জনৈক ছেলের বক্তব্যঃ
আমার থেকে কম বয়সী ছেলেদের আমার নিজের থেকে বেশী পুরুষোচিত মনে হয়। আর যারা আমার সমবয়সী, তাদের তো আরও বেশী পুরুষোচিত মনে হয়। আমি কেন ওদের মতো দেখতে না? কেন আমার মধ্যে পৌরুষের এত অভাব? এই কথা ভেবে আমার সারাক্ষণ হতাশ এবং বিব্রত লাগে। সাথে সাথে একটা মানসিক চাপও অনুভব করি।

উত্তরঃ
ক) মানসিক চাপ বলতে তুমি কি বুঝো?
খ) বসে বসে এটা নিয়ে দুঃখ করে কোন লাভ হবে না। এবার এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা কর।
গ) অন্য পুরুষ বা অল্প বয়সী ছেলেদের সাথে থাকতে তোমার খারাপ লাগে। বিব্রত বোধ কর। তাদের তুলনায় তোমার নিজের মধ্যে পৌরুষের অভাব বোধ কর। অথচ তোমার খুব ইচ্ছে করে তাদের মতো হতে
ঘ) পুরুষোচিত চেহারা না হলেও তোমার মধ্যে তো অন্য অনেক পুরুষোচিত গুন আছে।
ঙ) তুমি বরাবর ঘরের মধ্যে থাকতে ভালোবাস। বাইরে বেরিয়ে খেলাধূলা বা ব্যায়ামের অভ্যাস তোমার নেই। তাই অন্যান্য পুরুষদের মতন তোমার লম্বা-চওড়া শক্তিশালী চেহারা না। সেই জায়গায় তুমি রোগা ও ছোটখাট দেখতে বলে, তোমার ধারণা তুমি যথেষ্ট পুরুষোচিত না।

৬। জনৈক মায়ের বক্তব্যঃ
আমার ছেলে খুবই অসুস্থ। বাড়িতে এমন কেউ নেই যে তার দেখাশুনা করতে পারে। আমি অফিস থেকে ছুটি নিতে চাই, কিন্তু আমার সমস্ত ছুটি ফুরিয়ে গেছে। আমি এখন কি করি বলুন তো?

উত্তরঃ
ক) আসলে কোনটি তোমার প্রধান কর্তব্য-অফিস না তোমার ছেলের স্বাস্থ্য-তুমি এটা ঠিক করতে পারছ না মনে করছো।তোমার ছেলের স্বাস্থ্যের জন্য তুমি যেমন চিন্তিত তেমন তোমার চাকুরীর ব্যাপারেও তুমি উদ্বিগ্ন বোধ করছ।
খ) এইরকম সংকটময় মুহূর্তের জন্য তোমার ছুটি কিছুটা বাঁচিয়ে রাখা উচিত।
গ) তুমি কি তোমার উর্দ্ধতন অফিসারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছ?
ঘ) তুমি এতটা চিন্তিত হচ্ছো কারন তুমি মনে করছ-তুমি ছাড়া তোমার ছেলের দেখাশোনা অন্য কেউ করতে পারবে না। আসলে অন্যেরা তোমারই মতো করে তোমার ছেলের দেখাশোনা করতে পারে এটা বোঝার চেষ্টা কর।
ঙ) আমি তোমার বসকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি, উনি সত্যিই অত্যন্ত ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল মানুষ। তুমি যদি আলাদা তোমার সমস্যার কথা তাকে বল, আমার মনে হয় উনি নিশ্চয়ই তোমার ছুটির একটা ব্যবস্থা করে দিবেন।

উত্তরপত্র

(নীচে উত্তরগুরো দেওয়া আছে আপনার সংগে মিলিয়ে নিন)

নামঃ

নারী/পুরুষঃ

বয়সঃ

পেশাঃ

তারিখঃ

error: Content is protected !!