অধিবেশন ৬: কি কি উপায়ে সেবা গ্রহীতার সংগে একটি সফল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পা্ের এবং এর প্রয়োজনীয়তা

অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ

এই সেশন শেষে আপনি-
১. মানব যোগাযোগ কি এবং কত প্রকার জানবেন
২. এর সংগে সংশ্লিষ্ট দক্ষতাগুলো জানবেন এবং শিখবেন
৩. একজন সেবা প্রদানকারী হিসেবে এই দক্ষতাগুলো ব্যক্তি এবং কর্মজীবনে প্রয়োগের কার্যকারিতা বিষয়ে অনুপ্রেরণা পাবেন

যোগাযোগঃ

দু’জন ব্যক্তির মাঝে যখন ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয় তখন তাকে মানব যোগাযোগ বলা হয়। যে উদ্দেশ্যে এই যোগাযোগ করা হলো, তা যদি দু’জনের কাছে পরিস্কার এবং স্পষ্ট থাকে তাহলে সেই যোগাযোগকে অনেকাংশে সফল বলা যায়।
সাধারণত দু’ভাবে আমরা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকি। যথা-
১. বাচনিক যোগাযোগ এবং
২. অবাচনিক যোগাযোগ

বাচনিক যোগাযোগঃ

কথা বলার মাধ্যমে যখন একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সাথে ভাবের আদান প্রদান করে সম্পর্ক স্থাপন করে তখন তাকে বলা হয় বাচনিক যোগাযোগ। যেমন- “আপনি কেমন আছেন?”

অবাচনিক যোগাযোগঃ

কথা না বলে কেবল অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যখন অপর একজন ব্যক্তির সাথে ভাবের আদান প্রদান করে থাকে তখন তাকে বলা হয় অবাচনিক যোগাযোগ। যেমন- দুই হাত দিয়ে ইশারায় বলা, “কেমন আছেন?”

বাচনিক এবং অবাচনিক যোগাযোগ দক্ষতাঃ

আলাদাভাবে যোগাযোগ দু’রকমের হলেও, সাধারণভাবে বলতে গেলে একটি মানব যোগাযোগকে সফল হতে হলে এই দু’ধরণের যোগাযোগেরই একটি সার্বিক সম্মিলনের প্রয়োজন হয় এবং এর সাথে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোরও প্রয়োগ করতে হয়। ৬.১-হ্যান্ডআইটে আপনি বাচনিক এবং অবাচনিক যোগাযোগ করার কিছু দক্ষতা সম্পর্কিত তথ্য পড়তে এবং জানতে পারবেন।
# একে অপরের সাথে যোগাযোগের তিন রকমের ভঙ্গিমা হতে পারে-

১. এ্যগ্রেসিভ ভঙ্গিমাঃ- নিজের সুবিধা-অসুবিধা, বক্তব্য, ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রকাশ করা হয় এমন ভাবে যে সেটা অপরকে আঘাত করে। এর অন্তর্নিহিত বার্তা হলো আমি ঠিক, আমি অধিকতর উচ্চস্তরে আছি, তুমি ভুল, তুমি আমার তুলনায় নিচু স্তরে আছো। এ্যগ্রেসিভ আচরণ করলে একটা সুবিধা আছে যে,

– নিজের ইচ্ছামত কাজ অনেক সময়েই করিয়ে নেওয়া যায়
– অন্যলোক বিরক্ত হয়ে বা ভয় পেয়ে তার কথা মেনে নেয়
– কিন্তু অন্যদিকে মানুষের সাথে তাদের সুস¤পর্ক তৈরি হয় না লোকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, নয়তো তাদের সঙ্গে খোলামেলাভাবে মেশে না পাছে বিবাদ বা সংঘর্ষ হয়

২. প্যাসিভ ভঙ্গিমাঃ- নিজের বক্তব্য সুবিধা-অসুবিধা ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রকাশ করে না। করলেও পরোক্ষভাবে করে বা স¤পূর্ণ করে না। এর অন্তর্নিহিত বার্তা হলো, আমি দূর্বল, তুমি আমার তুলনায় উচ্চস্তরে ও ক্ষমতাবান, তুমি ঠিক। এই ভঙ্গিমার একটা সুবিধা হল,

– এর দ্বারা নিজের মত অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া যায়
– ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করার প্রয়োজন হয় না
– কিন্তু অন্যদিকে দম বন্ধ হয়ে আসে
– নিজের চাহিদা মেটানো যায় না বলে ভিতরে ভিতরে রাগ হয়

৩. এ্যসারটিভ ভঙ্গিমাঃ- নিজের বক্তব্য, সুবিধা-অসুবিধা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করে অন্যকে আঘাত না করে। এর অন্তর্নিহিত বার্তা হলো তোমার সঙ্গে আমার মতামত এর পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু একে অপরের কাছে মতামত প্রকাশ করার সমান অধিকার আছে। এই ভঙ্গিমায় সুবিধা হল,

– সক্রিয়ভাবে আলোচনায় ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করা যায়,
– অন্যকে আঘাত প্রদান না করে নিজের চাহিদা পূরণ করা যায়
– সসম্মানে ও সুষ্ঠুভাবে মতামত ও অনুভূতি আদান-প্রদান করা যায়
– নিজের আত্মবিশ্বাস রক্ষা করা যায়

# পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি আমাদের গুরুত্ব আরোপ করতে হবেঃ

১. শারীরিক ভাষার মাধ্যমে (BODY LANGUAGE): আমরা দেহভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গিমা, মুখভঙ্গিমা ও দেহের শিহরণ বা ক¤পন দ্বারা আমাদের না বলা কথার অনেকটাই অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারি।

২. কণ্ঠস্বরের দ্বারা (VOICE): কণ্ঠস্বরের ওঠানামা, দ্রুততা, সাবলীলতা, তীক্ষèতা, প্রকাশ ভঙ্গিমায় একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে এবং আমাদের বক্তব্য তাৎপর্যমন্ডিত করে তোলে হাসি-কান্না, তর্জন-গর্জন, দীর্ঘশ্বাস প্রভৃতি নির্দিষ্ট কয়েকটি আবেগের মতই।

৩. শব্দ প্রয়োগ বা যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে (WORDS): আমাদের চিন্তা ভাবনা এবং অনুভূতির যথার্থ প্রকাশ সম্ভব হয় সঠিক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের মুখের কথা ও প্রকাশিত ভাব যা আমাদের গলার স্বর বা অঙ্গভঙ্গিমার দ্বারা অর্থপূর্ণ হয়ে উঠে পার¯পরিক সংহতি বজায় রাখতে পারে না।

সুতরাং পার¯পরিক ভাব বিনিময়ের সময় আমরা সতর্ক থাকব সঠিক শব্দ ব্যবহারের ও আমাদের (Non verbal) অবাচনিক প্রকাশভঙ্গিমার মধ্যে যেন কোনও বৈপরীত্য না থাকে। তাছাড়া পর্যবেক্ষক (Observer) হিসেবে আমাদের সতর্ক ও সংবেদনশীল (Sensitive) হওয়া প্রয়োজন, যখন আমরা আরেকজনের প্রকাশিত মনোভাবকে বোঝার চেষ্টা করছি এর দ্বারা আমরা নিশ্চিত হতে পারি প্রকাশিত ভাবটি সঠিকভাবে আমাদের বোধগম্য হয়েছে এবং আমরা যথার্থভাবে উত্তর দিতে পেরেছি।

৬.১-হ্যান্ডআইট

বাচনিক এবং অবাচনিক যোগাযোগের কিছু দক্ষতাসমূহ

error: Content is protected !!