অধিবেশণের উদ্দেশ্যঃ
১. সেবা প্রদানের সময় সহমর্মিতা কিভাবে দেখানো যেতে পারে এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যাবে
২. যোগাযেগের ক্ষেত্রে সহমর্মিতা কিভাবে সহায়ক হয়ে থাকে সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা পাবেন
৩. সেবা গ্রহীতার ইতিবাচক বা নেতিবাচক অনুভূতিগুলো বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে
৪. সহানুভূতি এবং সহমর্মিতার মধ্যকার পার্থক্য করতে শিখবেন
সহমর্মিতা (Basic Empathy)
সহমর্মিতা হচ্ছে অন্যের অভিজ্ঞতা, আচরণ এবং অনুভূতিকে তার মতো করে বুঝে তার সাথে কথা বলে। এই দক্ষতা সহায়তা করার প্রক্রিয়া সার্বক্ষনিকভাবে প্রয়োজন। কারণ ব্যক্তির সাথে ভাব বিনিময় করার জন্য তার মত করে তাকে বোঝা অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যেভাবে কোন একটা বিষয় দেখছে বা অনুভব করছে সেই আঙ্গিকেই বিষয়টিকে অনুভব করা প্রয়োজন। এটা ব্যক্তির সাথে স¤পর্ক স্থাপনে কিংবা স¤পর্ক উন্নয়নে খুবই সাহায্য করে।
সহমর্মিতা একটি বিশেষ গুণ যা একজন সেবা প্রদানকারীর থাকতে হয়। আমরা নিজের পূর্ব ধারণা থেকে বের হয়ে অন্য ব্যক্তির ধারণার জগতে প্রবেশ করে তা বোঝার চেষ্টা করতে পারি। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সহমর্মিতা কিভাবে দেখানো যেতে পারে তা শেখানো যায়। তবে অনেক ব্যক্তি জন্মগতভাবেই সহমর্মিতা দেখানোর অধিকারী হয়ে থাকেন।
ব্যক্তির সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হলে তার সঠিক আবেগ এবং তীব্রতার ধরণ বুঝে তার অনুভূতিটি প্রকাশ করতে হবে। নিচে কয়েকটা উদাহরণ দেয়া হলোঃ
- আপনি নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছেন কারণ ওরা আপনাকে হুমকি দিচ্ছে কিন্তু আপনি করতে পারছেন না।
- আপনার অপরাধ বোধ হচ্ছে কারণ সে আপনার কাছে সরাসরি সাহায্য চেয়েছে কিন্তু আপনি কোন উত্তর দেন নি।
বেসিক এ¤েপথি বা সহমর্মিতাকে ফলপ্রসূ করার জন্য সঠিক আবেগটিকে ধরতে হবে। সাহায্যকারীকে অত্যন্ত মনোযোগী হতে হবে।
সহমর্মিতাতে যে বিষয়গুলো ঘটে তাহলোঃ
- অনুভূতির প্রতিফলণঃ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবা গ্রহীতার যে অনুভূতিগুলো হয়েছিলো তা প্রতিফলিত করা হয়। যেমন, “আপনার রাগ লাগছিল”, আপনার কষ্ট হচ্ছিল।
- বিষয়বস্তুর প্রতিফলণঃ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবা গ্রহীতার যে অনুভ’তিগুলো হয়েছিল তার সাথে যে বিষয়বস্তু বা ঘটনা জড়িত তার প্রতিফলণ করা হয়। যেমন- “আপনার রাগ লাগছিল কারণ আপনি ভেবেছেন যে আপনাকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেয়া হয়নি”,”আপনার কষ্ট হচ্ছিল কারণ আপনার মনে হয়েছে মা আপনাকে যথেষ্ট ভালবাসেন না”।
- নির্বাচিত প্রতিফলণঃ সেবা গ্রহীতার প্রতিটি কথাই সমানুভূতির সাথে শুনা হয়, তবে প্রতিফলণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ আবেগের বক্তব্যকেই প্রতিফলিত করা হয়।
- সারসংক্ষেপঃ প্রতিটি সেশন শেষে সারসংক্ষেপ করার সময় সেবা গ্রহীতার বক্তব্যকে সমানুভূতি দিয়ে উপস্থাপন করা হয়।
- সক্রিয় শ্রবণ বা অ্যাক্টিভ লিসেনিংঃ সক্রিয় শ্রবণ বা অ্যাক্টিভ লিসেনিং ও সহমর্মিতা দেখানোর জন্য জরুরী।
উপরের সব কিছুই সহমর্মিতা তৈরীতে সাহায্য করে। অর্থাৎ সহমর্মিতা প্রকাশে বাচনিক ও অবাচনিক উভয় যোগাযোগেরই প্রয়োগ হয়।
অনুভূতি এবং আবেগ বিভিন্নভাবে নির্দেশিত হতে পারে যেমন-
- আমি ভাল
- আমি হতাশ
- আমি অবহেলিত
- আমি আনন্দিত
- আমি বিরক্ত
- আমি বিষন্ন
- আমি বন্দি
বিভিন্ন প্রকারের বাক্যাংশ-
- আমি পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে বসে আছি
- আমার মনে হচ্ছে আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে
- আমার মনে হচ্ছে আমি যেন জ্বলছি
- আমার মনে হচ্ছে আমাকে আবর্জনার মত ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে
একটা আচরণগত বক্তব্য দিয়ে প্রকাশ করা-
- আমার মনে হচ্ছে আমি আর পারছি না (অনুভূতি: বিরক্ত)
- আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরি (অনুভূতি: আনন্দ)
- আমার মনে হচ্ছে তার দাঁত মুখ ভেঙ্গে দিই (অনুভূতি: খুব রাগ)
- আমার মনে হচ্ছে আমার কষ্টের দিন শেষ এবং আমার নাচতে ইচ্ছা করে (অনুভ’তি: মুক্তি এবং আনন্দ)
অভিজ্ঞতার আলোকে কোন বহিঃপ্রকাশ করা-
- আমার মনে হচ্ছে আমি তার লিষ্টের সবচেয়ে ওপরে আছি (অনুভূতি: আনন্দ)
- আমার মনে হচ্ছে আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে (অনুভূতি: উদ্বেগ)
- আমার মনে হচ্ছে আমি কেমন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছি (অনুভূতি: হতাশা এবং বিরক্ত)
উপরের বক্তব্যগুলোর সাথে আবেগের প্রকাশ যোগ করে যেভাবে বলা যায় তার উদাহরণ হচ্ছেঃ
- আমার দারুন লাগছে কারন আমি বিশ্বাস করছি যে আমি তার লিষ্টের সবচেয়ে উপরে আছি
- আমি উদ্বিগ্ন কারন আমার মনে হচ্ছে যে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
- আমি বিরক্ত হচ্ছি কারন আমি কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছি।
বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি এবং আবেগময় ঘটনা সম্বলিত কিছু পরিস্থিতি নীচে বর্ণিত হলো-
“তুমি মনে করো যে তুমি এই ব্যক্তির সাথে কথা বলছ। লক্ষ্য কর অন্যের অনুভূতি বোঝার ও তা অন্যকে বোঝানোর জন্য চার ধরনের পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়েছে”।
ঘটনাটি হচ্ছে একটা মেয়ে তার পছন্দের একটি চাকরি পেল।
একক শব্দঃ তুমি খুশী
একটি বাক্যাংশঃ তোমার মনে হচ্ছে তুমি আকাশে উড়ছো।
আচরণ স¤পর্কিত বক্তব্যঃ তোমার ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে খবরটা সবাইকে জানাতে।
অভিজ্ঞতা স¤পর্কিত বক্তব্যঃ তোমার মনে হচ্ছে, তোমার যা প্রাপ্য তাই তুমি পেয়েছো।
কোনটি সহমর্মিতা নয়?
সহমর্মিতার সাথে কতগুলো বিষয় খুব গুলিয়ে যায়ঃ
– সহানুভূতি দেখানো
– দিক নির্দেশনা বা সাজেশন দেওয়া
– বিচারক সুলভ মনোভাব
– অনুভূতিহীনতা বা এ্যাপাথি, অর্থাৎ ব্যক্তির মধ্যে অনুভ’তির প্রকাশ থাকে না
—এগুলো থাকলে তখন সহমর্মিতা দেখানো যায় না।
সহানুভূতি ও সহমর্মিতা
সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সহমর্মিতা হচ্ছে, অন্যের অভিজ্ঞতা, আচরণ, অনুভূতিকে তার মত করে বুঝে তার সাথে কথা বলা। সাহায্যপ্রার্থীকে তারমত করে বুঝাতে হবে, কারন একজন ব্যক্তি যেভাবে একটা বিষয় দেখছে বা অনুভব করছে সে আঙ্গিকেই বিষয়টি অনুভব করা প্রয়োজন। এটা স¤পর্ক স্থাপনে এবং উন্নয়নে খুবই সাহায্য করে।
আর অপরদিকে সহানুভূতি হচ্ছে নিজের উদাহরণ দিয়ে অন্যকে সান্ত্বনা দেয়া। এক্ষেত্রে ব্যক্তি অন্যের অনুভূতির উপর গুরুত্ব না দিয়ে কিংবা অন্যের অনুভূতিকে বোঝার চেষ্টা না করে নিজের অনুভুতিকে প্রকাশ করে থাকে এবং নিজের মত করে সমাধান দেয়ার চেষ্টাকরে। নীচে অনুভূতির একটি তালিকা দেওয়া হলোঃ
সহমর্মিতা প্রদর্শনের সূত্রঃ
সহমর্মিতার সাধারন সূত্র হলোঃ অনুভূতি + কারণ = সহমর্মিতা
- “তোমার হতাশ লাগছে কারন তোমার মনে হচ্ছে তুমি কখনও পরীক্ষায় পাশ করবে না”
- “তোমার বেশ কষ্ট লাগছে কারন তুমি ভাবছো মা তোমাকে ভালবাসেন না”
- “তার তীব্র রাগ হয়েছে কারন সে ভেবেছে সে যথেষ্ট প্রাধান্য পায়নি”
কিভাবে সেবা গ্রহীতার প্রতি সহমর্মিতা (Empathy) প্রকাশ করা যায় :
- খুব মনোযোগ দিয়ে সেবা গ্রহীতার মৌখিক ও দৈহিক অভিব্যক্তিগুলো লক্ষ্য করতে হবে।
- সেবা গ্রহীতার অভিব্যক্তিগুলোর সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হবার চেষ্টা করতে হবে।
- সেবা গ্রহীতার জন্য সহজে বোধগম্য হয় এধরনের ভাষায় তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
- সেবা গ্রহীতার যে ধরনের অনুভূতি নিয়ে কথা বলছে সাহায্যকারীর গলার টোন সেধরনের হতে হবে।
- যতটা সম্ভব স্বতঃস্ফুর্তভাবে উত্তর দিতে হবে। অনেক সময় ধরে চুপ করে থাকাটা ঠিক নয়। সাহায্যকারী কি বুঝেছেন সেটা ব্যক্ত করে তারপর তিনি সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে জেনে নেবেন তিনি তার কথা ঠিক মতো বুঝেছেন কিনা।
- দুজন দু’জনের কথা বুঝতে পারছে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে, তাতে করে সেবা গ্রহীতা আস্তে আস্তে তার অনুভূতির বিভিন্ন স্তরগুলো সাহায্যকারীর সামনে তুলে ধরবে।
- সেবা গ্রহীতা যে কথাগুলো বলতে পারছে না, সেগুলোর উপর মনোযোগ স্থাপন করতে হবে। তার কথাগুলোর মধ্যে যদি কিছু ফাঁক থাকে সেগুলো খুঁজে বের করে ফাঁকগুলো ভরে দেবার চেষ্টা করতে হবে।
- সাহায্যকারীর প্রতিক্রিয়াগুলো কতটুকু ফলপ্রসু হয়েছে সেটা সেবা গ্রহীতার আচরন এবং অভিব্যক্তি থেকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
নীচে উল্লেখিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি ব্যক্তির অনুভূতি ধরে সহমর্মিতার সূত্র অনুযায়ী সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারবেন।
Exercise in Basic Empathy
নীচের ঘটনা গুলোতে দুটো ভিন্ন পদ্ধতিতে উপযুক্ত অনুভ’তি এবং বিষয়বস্তু লিপিবদ্ধ করতে হবে-
১. একজন ভদ্রমহিলার মেয়ে ডিগ্রী পাস করেছে, তিনি সেই উপলক্ষে কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি চিন্তা ও করেননি তার মেয়ে পাস করতে পারবে। তিনি পরিশেষে বললেন “আমি সেখানে যাওয়ার জন্য ভীষনভাবে অপেক্ষা করে আছি”।
ক) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
খ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)
২. এক ভদ্রমহিলার ব্যাগ চুরি হলো। তিনি কিছুক্ষন আগে তার সাপ্তাহিক বেতন তুলেছেন এবং সেই টাকাটা তার হাত ব্যাগেই ছিলো। তিনি পরিশেষে বললেন যে, “আমার সমস্ত বিল পরিশোধ করতে হবে। আমি জানিনা আমি কি করবো।
গ) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
ঘ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)
৩. একজন ভদ্রলোক কিছু শারিরীক পরীক্ষা করতে দিয়েছেন এবং তার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। গত দুইমাস ধরে তার ওজন কমে যাচ্ছে এবং তিনি সবসময় ক্লান্ত এবং অবসন্ন বোধ করেছেন। পরিশেষে তিনি বললেন “আমি মানে ………… মানে ঠিক বুঝতে পারছিনা আমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে কেউই আমাকে কিছুই বলছে না”।
ঙ) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
চ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)
৪. একজন ভদ্রলোক একটি চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েছেন যার কি না একটা অপরাধের ইতিহাস আছে। তিনি আশা করেছিলেন যে তিনি চাকরিটা পাবেন এবং কেউ কিছু জানার আগেই তিনি এই কাজের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলবেন। পরিশেষে তিনি বললেন “যে ব্যক্তি আমার সাক্ষাৎতকার নিচ্ছিলো তিনি যখন আমাকে বললেন যে তিনি আমার অপরাধের ইতিহাস জানেন তখন আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কি বলবো।
ছ) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
জ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)
৫. একজন ভদ্রমহিলা তার বাচ্চাকে পাওয়ার জন্য তার স্বামীর বিরুদ্ধে কেস করেছিলেন এবং হেরে গেছেন। তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে কোর্ট তার বাচ্চাকে তার স্বামীর কাছে হস্তান্তর করবে বা রায় তার স্বামীর পক্ষে যাবে যাকে তিনি একজন স্বার্থপর এবং ক্ষতিকর ব্যক্তি হিসেবে জানেন। পরিশেষে তিনি বললেন “এখন সব শেষ।”
ঝ) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
ঞ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)
৬. একজন দ¤পত্তির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। তাদের বিবাহিত জীবন ছিলো এক বৎসরের তিনি চিন্তা করেছেন যে যা হয়েছে সেটা ভালো হয়েছে। তিনি তার হাঁটুতে মাথা রেখে পরিশেষে বললেন “এখন আমি কি করবো?”
ট) ………………………………………………(শুধু অনুভ’তি)
ঠ) ………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………(অনুভ’তি ও কারন)