এই সেশন শেষে আপনি-
১. সেবা প্রদানকারী হিসেবে নিজের যত্ন করা কেন জরুরী তা অনুধাবন করতে পারবেন
২. মানসিক চাপ সম্পর্কে জানবেন
৩. কিছু এক্সারসাইজ সম্পর্কে জানবেন যা আপনাকে শান্ত বা রিলাক্স হতে সাহায্য করবে
নিজের যত্নঃ
আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন/ নানান ধরণের কাজ করতে হয়। (নারীদের জন্য) যেমনঃ (সকালে ঊঠে) বাড়ী-ঘড় ঝাড়ু দেয়া, রান্না-বান্না করা, সন্তাদের দেখাশোনা করা, জিনিসপত্র গোছানো, নামাজ-কালাম পড়া, চাকুরী করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়। (পুরুষদের জন্য) যেমনঃ চাকুরী করা, নামাজ-কালাম পড়া, বাজার-সদাই করা, বাড়ী-ঘর দেখা শোনা করা ইত্যাদি কাজ করতে হয়। আর এইসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা আমাদের নিজের যত্ন নেওয়া বা পরিচর্যা করতে ভুলে যাই। বিশেষ করে- যখন আমাদের আবেগ, অনুভূতি, আচরণ, সামাজিক বন্ধন, পারস্পরিক সম্পর্ক, কাজের চাপ বা জীবন ধারণের প্রতিকূল পরিস্থিতি আমাদের মন ও শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে; তখন সেগুলো মোকাবেলা করতে না পারলে আমরা নিজেদের দিকে খেয়াল করতে ভুলে যাই। কখনো কখনো অস্থির হয়ে যাই কিংবা খারাপ/নেতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করি।
এবার মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন-
“আপনার কি এমন কোন ঘটনা মনে পরে যেখানে কোন কারনে সময় মতো খাওয়া বা ঘুম বা গোসল হয়নি……সময় অনুযায়ী যে ধরনের পরিচর্যা করা দরকার তা করা হয়নি, এমন যেকোন বিষয় হতে পারে। আপনি কি এ ধরণের কোনো ঘটনা সনাক্ত/মনে করতে পারেন?!”
এবার ভাবুন তো ঐ সময়ে,
“নিজের পরিচর্যা করার জন্য আপনি কী কী উপায় অবলম্বন করেছিলেন?
“ভেবে দেখুনতো, আমরা এসব কিছু করতে পারি কিনা- কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মানসিকভাবে ভাল থাকার জন্য?
– পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা
– স্বামী বা স্ত্রীর সাথে ভালবাসা ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক থাকা
– প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলার জন্য সময় বের করা
– নিজের সন্তানদের সাথে সময় অতিবাহিত করা
– অন্যকে সাহায্য করা
– শারীরিক ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম এর সুযোগ থাকলে করা
– ধর্মীয় অনুশাসন পালন করা
– সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা এবং
– সর্বদা ভাল থাকার চেষ্টা করা”
একজন সেবাপ্রদানকারী হিসেবে অন্য আরেকজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে হলে, নিজেকে মানসিকভাবে সু¯’ এবং স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। তা না হলে, আরেকজন ভূক্তভোগীর মানসিক স্বা¯ে’্যর সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো বোঝার মতো সামর্থ নাও হতে পারে।
আমাদের সবসময় নিজেদের পরিচর্যা করা এবং তা অনুশীলন করা প্রয়োজন। এটি আমাদের সাহায্য করবেঃ
– খারাপ, প্রতিকূল ও কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে
– শুধুমাত্র নেতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং দিকগুলোর উপর মনোযোগ না দিয়ে বরং জীবনের ইতিবাচক ও সুন্দর সময়গুলোকে মনে করিয়ে দিতে
– পরিবেশ ও জগতের সাথে সংযোগ ও আশেপাশের মানুষের সাথে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে
– এমন ব্যক্তিদের চিনতে যারা আমাদের সাহায্য করতে পারে বা আমরা বিশ্বাস করতে পারি
– নিজেদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে কিভাবে ভাল থাকা যায় তা বুঝতে ও করতে
এবার জেনে নেই মানসিক চাপ এবং করনীয় সম্পর্কেঃ
চাপঃ আমাদের শরীর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা করতে গিয়ে যে টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যায় তাকেই বলে স্ট্রেস বা চাপ। মন ও শরীর দুয়ের উপরেই এই চাপের প্রভাব পড়ে, যা কিনা ইতিবাচক বা নেতিবাচক উভয় ধরনের অনুভূতি উৎপন্ন করতে পারে। ইতিবাচক প্রভাব হলে আমাদের কাজে প্রবৃত্ত করে। যার ফলে আরও সচেতনতা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
লক্ষণঃ আমরা যখন চাপে থাকি তখন চাপ সংক্রান্ত অনেক চিহ্ন এবং লক্ষণ আমরা নিজেদের মধ্যে লক্ষ করতে পারি।‘স্ট্রেস বা চাপ’ এর লক্ষণ গুলি ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হয় এবং নির্ভর করে মূলতঃ দু’টি বিষয়ের ওপর
১. চাপ সৃষ্টিকারী পরি¯ি’তি কতটা তীব্র এবং তার ¯’ায়িত্ব কতটা।
২. যে ব্যাক্তি চাপ অনুভব করছে তার ব্যক্তিত্বের গঠন কিরকম।
চাপ-এর চিহ্ন এবং লক্ষণগুলি আমাদের অনুভূতি, চিন্তা,আচরণ এবং শারীরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়।
অনুভূতিঃ আমরা যখন চাপ অনুভব করি তখন নিম্নলিখিত অনুভূতিগুলি উৎকণ্ঠা, ভীতি, বিরক্তি, খেয়ালীভাব, অসহায়তাবোধ,নৈরাশ্য, বিপদগ্র¯’ মনোভাব, আত্মরক্ষামূলক, দুঃক্ষ, অনাসক্তি।
চিন্তাঃ স্ট্রেস বা চাপের সময় যে চিন্তাগুলি প্রভাবশালী হয় সেগুলি হল –
– নিজের যোগ্যতা এবং ক্ষমতা স¤পর্কে সন্দেহ প্রকাশ।
– কোন বিষয়ে মনোযোগ দিতে না পারা।
– ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা।
– বিভিন্ন ধরনের ভাবনা ও কাজ নিয়ে আবিষ্ট থাকা।
– ভুলে যাওয়া।
– ভাবনায় গতি হ্রাস পাওয়া।
– অতি দ্রুত নানা বিষয় চিন্তা করা।
আচরণ সংক্রান্ত লক্ষণঃ চাপ অনুভূতির সাথে কিছু আচরণগত পরিবর্তনও যুক্ত।
– কথা বলার সময় তোতলামি বা অন্য কোন রকম সমস্যা হওয়া।
– আপাতদৃষ্টিতে কোন কারন ছাড়াই সমানে কেঁদে যাওয়া।
– আবেগ তাড়িত আচরণ করা।
– সহজে চমকে ওঠা।
– উ”চস্বরে হাসা
– গলার স্বরে স্নায়বিক দূর্বলতা প্রকাশ পাওয়া।
– দাঁত কিড়মিড় করা।
– অতিরিক্ত ধূমপান।
– অতিরিক্ত মদ বা মাদকদ্রব্য সেবন।
– দুর্ঘটনাগ্র¯’ হওয়া।
– যৌন আচরণে সমস্যা।
– ক্ষিদে কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত খাওয়া।
– অধৈর্য ভাব।
– তাড়াতাড়ি বিতর্কে জড়িয়ে পড়া।
– পারিপার্শ্বিক অব¯’া থেকে গুটিয়ে যাওয়া।
– ই”ছাপূর্বক কোন বিষয়ে বিলম্ব করা।
– একা একা থাকতে চাওয়া।
– দায়িত্ব পালনে অবহেলা।
– পেশাগত কাজের ক্ষেত্রে ভালোভাবে কাজ না করা।
– নিজের শরীর স্বা¯ে’্যর স¤পর্কে মোটেই সজাগ না থাকা। শরীর বৃত্তীয়
লক্ষণঃ
– শরীর এবং হাত ঘামা।
– হৃদ¯পন্দন বেড়ে যাওয়া।
– কাঁপন।
– আচরনগত মুদ্রাদোষ।
– রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া।
– মুখ,গলা শুকিয়ে যাওয়া।
– সহজে ক্লান্ত হওয়া।
– বারেবারে প্রসাব করা।
– ঘুমের সমস্যা।
– পেটের অসুখ বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া।
– বমি হওয়া।
– পেট গুড়গুড় করা।
– মাথাধরা।
– মেয়েদের মাসিকের আগে দুঃশ্চিন্তা।
– গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া।
– ব্যথা
চাপ কোন কোন জায়গা থেকে সাধারণত আসে তা খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে যে আমাদের পরিবেশ বা পরি¯ি’তি আমাদের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করে। এর মধ্যে পাশের পুজো প্যান্ডেলে উদ্দাম মাইক বাজানোর ফলে শব্দদূষণের চাপ রয়েছে, তেমনি কাজের জায়গায় স্বাধীনতা না থাকার বা সহকর্মীদের সহযোগিতা না পাবার চাপও থাকতে পারে। সমাজ ও নানাভাবে আমাদের ওপর চাপ দেয়। সমাজের কিছু নিজস্ব নিয়ম আছে, যেগুলো মেনে চলা মানিয়ে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত আমাদের ওপর চাপ দেওয়া হয়। একজন মানুষের শরীর তার নিজের নিয়মে কখনো কখনো মনের ওপর চাপ ফেলে, যেমন বয়সন্ধির সময়, অন্তঃসত্ত্বা অব¯’ায় বা প্রসবের পর, বার্ধক্যের সময় ইত্যাদি। একেকজনের চিন্তা ভাবনার মধ্যে চাপের উৎস লুকিয়ে থাকে। নিজেকে অতিরিক্ত বড় বা ছোট মনে করা, যে ঘটনার ওপর কোনো হাত নেই তা নিয়ে চিন্তা করা, নানারকম অবাস্তব চাহিদা থাকা, এসব থেকে মনের ওপর চাপ পড়ে খুব। অর্থাৎ নিজেকে ঠিকঠাক বুঝে নিতে না পারলে, যুক্তি দিয়ে পরিবেশ /পরি¯ি’তির মোকাবেলা করতে না পারলে সমাজের অহেতুক চাপের মুখে দৃঢ় হয়ে না দাঁড়াতে পারলে তারা আপনাকে অসুবিধায় ফেলার চেষ্টা করেই যাবে।
চাপের উৎসঃ আমাদের চাপ মূলত চার ধরণের উৎস থেকে হতে পারে –
১. পরিবেশ: আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আমাদের কাছে সর্বদা মানিয়ে চলার দাবি করে। কিš‘ কখনও কখনও
বেঁচে থাকা অথবা অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
– ব্যক্তিগত জগতে সমস্যার অনুপ্রবেশ ঘটে।
– কাজের এবং বসবাসের জায়গা যথার্থ নয়।
– শব্দের তীব্রতা।
– নোংরা এবং অপরি”ছন্ন পরিবেশ।
– দূষণ।
– অগোছালো পারিপার্শ্বিক পরি¯ি’তি ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন পরিমাণ চাপের সৃষ্টি হতে পারে।
২. সামাজিক কারণ: সামাজিক ক্ষেত্রে নিচের পরি¯ি’তিগুলি আমাদের চাপের কারণ হতে পারে।
– সময় ও মনোনিবেশের দাবি।
– কাজ করার সময়সীমা।
– আর্থিক সমস্যা।
– চাকরীর পরীক্ষা/ ইন্টারভিউ
– যথার্থ সময়ের মধ্যে কাজ স¤পাদন করার চাপ।
– মতবিরোধ।
– প্রিয়জনকে হারানো বা বি”েছদ হওয়া।
– পরিবারের পরিবর্তন।
– স¤পর্কের ক্ষেত্রে চাহিদা সংঘাত।
– কাজের চাপ।
৩. শারীরবৃত্তীয় উৎস
– বয়সন্ধিকালে দ্রুত বৃদ্ধি ও পরিবর্তন।
– মাসিকের আগের লক্ষণ /পরিবর্তনসমূহ।
– প্রসবের পরের পরি¯ি’তি।
– মাসিক বন্ধের প্রক্রিয়া বা তার পরবর্তী জীবন।
– অসু¯’তা।
– বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
উপরের এই শারীরিক পরিবর্তন বা অব¯’াগুলি চাপের ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় উৎস হতে পারে। এছাড়াও যথাযথ
শরীরচর্চার অভাব, পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত কফিপান, চিনি বা নুন খাওয়া এবং অস্বা¯’্যকর খাবারের অভ্যাসও- চাপের কারণ হতে পারে।
৪. চিন্তাধারা
কখনো কখনো ব্যক্তির অভ্যন্তরেই চাপের সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ জীবনের ঘটনা বা বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই সে সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তা বা উৎকন্ঠার থেকে বা জীবনের প্রতিক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করা -স্ট্রেস তৈরীর কারণ হতে পারে। উপরš‘ অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে স্বভাব, নিজের চাহিদা বা ই”ছাকে ক্রমাগত অস্বীকার করা ফলাফল বা পরিনাম বিষয়ে অতিরঞ্জন- কোন ঘটনার নাটকীয় বর্ণনা ইত্যাদি প্রবণতা থেকেও ব্যক্তি চাপের শিকার হতে পারেন।
কোনো কিছু অর্জন করার ক্ষমতা ও সবসময় সমস্ত পরি¯ি’তি নিয়ন্ত্রণে রাখার নিরীখে নিজের প্রতি অবাস্তব চাহিদা অন্যের কাছ থেকে সামগ্রিক এবং ধারাবাহিক সমর্থন, স্বীকৃতি, প্রশংসা ও নতিস্বীকার করা এসব অবাস্তব চাহিদাও চাপের সাধারণ কারণ।
নীচের তালিকাটির মাধ্যমে কাজের ক্ষেত্রে চাপ তৈরী করে এমন পরিস্থিতি গুলির উল্লেখ করা হলো
অতিরিক্ত চাপ আমাদের শরীর ও মনকে প্রভাবিত করে এবং স্বভাবতই আমাদের ব্যক্তিগত স¤পর্কগুলিতে এবং ব্যক্তির কর্মক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একজন ব্যক্তি তার কর্ম ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় না। তার কাজের গুণগত মান ও পরিমাণগত মান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্র¯’ হয়। এই অব¯’া পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে, কাজের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা পুনরায় চাপ বৃদ্ধি করে। এইভাবে চক্রের আকারে চাপের বৃদ্ধি ঘটে থাকে ও ক্রমশঃ ব্যক্তি মানসিক ও শারীরিকভাবে চাপের মুখে ভেঙে পড়তে থাকে। চাপের প্রভাবে একজন ব্যাক্তি ক্রমে তার কর্মক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত স¤পর্কের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়।
এ প্রসঙ্গে আরও বলা যেতে পারে যে, ক্রমাগত চাপের আঘাতে ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক দৃঢ়তা ক্রমশঃ কমতে থাকে এবং মানসিক অব¯’া অসহনীয় হয়ে উঠতে থাকে। এই অব¯’া কাটিয়ে সু¯’ হবার জন্য একজন ব্যক্তির চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এমনকি হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রয়োজন হয়। কারণ চিকিৎসার সাহায্যেই একমাত্র ঐ ব্যক্তি পূর্ণমাত্রায় সেরে উঠবে এবং পুনরায় তার সামাজিক ভূমিকা ও কার্যক্ষেত্রে তার সমস্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হয়ে উঠবে। নিজের সমস্ত সুপ্ত সৃজনশীল গুণাবলী সঠিকভাবে প্রকাশ করতে ও জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে পারবে।কাজের ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত উদ্যম, শক্তি ও উৎসাহ নিয়ে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে।
১০.১-হ্যান্ডআউট
চাপ ও তার মোকাবিলা
‘স্ট্রেস অ্যাওয়ারনেস’ চাপ স¤পর্কে সচেতন থাকার ডায়েরিঃ
কোন কোন বিষয় বা পরি¯ি’তি, ঘটনা বা অভিজ্ঞতা মনের ওপর চাপ তৈরি করে তার একটা তালিকা বানান যেখানে চারটি ক্ষেত্র ভাগ করে নিতে হবে – ব্যক্তিগত ক্ষেত্র, পারিবারিক ক্ষেত্র, আন্তস¤পর্কের ক্ষেত্র (আপনার সঙ্গে অন্য মানুষদের স¤পর্ক), আর কাজের ক্ষেত্র। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রকে আলাদা করে নিয়ে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোকে লিখুন। আবার এই লেখাটাকে চারটে ভাগ করুন। প্রথম ভাগে থাকবে চিন্তা, দ্বিতীয় ভাগে আবেগ/অনুভূতি তৃতীয় ভাগে আচরণ আর শেষভাগে শারীরিক লক্ষণ। অর্থাৎ প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে লিখতে হবে- চাপের ঘটনা- তার থেকে তৈরি হওয়া চিন্তা- তার ফলে তৈরি হওয়া আবেগ/অনুভূতি- তার প্রভাবে কি রকম আচরণ করেছেন- কোন শারীরিক লক্ষণ অনুভব করেছেন কিনা। এর সাথে যোগ করবেন এখন সেই ঘটনা আবার ঘটলে কি করতে চাইবেন। সব লেখা হয়ে গেলে প্রথমে আপনি দেখেছিলেন কোন ক্ষেত্রে আপনি সবথেকে বেশি চাপের পরি¯ি’তি খুঁজে বার করতে পেরেছেন। তারপর চেষ্টা করুন ভাবতে, কোন কোন পরি¯ি’তি বেশিরভাগ মানুষের জন্য চাপ তৈরি করছে, কোনগুলো আবার খুবই ব্যক্তিগত। কোন গুলোর সঙ্গে কি ধরনের চিন্তা- আবেগ- শারীরিক লক্ষণ এবং চাহিদা জড়িয়ে আছে, এগুলো খুটিয়ে দেখতে ও বুঝতে বলা হয়েছিল।
এই ডায়েরি আপনাকে অনেক দূর সাহায্য করতে পারে নিজের চাপের কারণ, ক্ষেত্র আর লক্ষণগুলোকে বুঝতে। একটা জিনিস এখান থেকে ¯পষ্ট যে আমরা কেউ চিন্তা- আবেগ/অনুভূতি- আচরণ- শারীরিক লক্ষণ দিয়েই প্রকাশ করি। সে সময়ে কি চাই, অর্থাৎ চাপ যখন আসে তখন আমরা কি করতে চাই, তাও নির্ভর করে আমরা চাপটা কিভাবে বুঝেছি, ভাবছি, তার ওপরে। মোকাবেলা করতে পারব কি না বা পারলেও কতদূর সঠিকভাবে, সেটা নির্ভর করে কি চাই তার উপরে। যদি মোকাবেলা করতে চাই এবং বাস্তবসম্মত, যুক্তিনির্ভর হয় তবে চাপের মোকাবেলা করা যাবে অবশ্যই। এখানে একটা কথা মনে রাখবেন, চাপের মোকাবেলা করতে হলে নিজের মনের মধ্যে যা যা হ”েছ সেগুলো পরিষ্কার বুঝে নেবার প্রয়োজন আছে।
নইলে যেটা চাইছেন সেই ধাপটায় পৌঁছাতে পারবেন না। বিশেষ করে আবেগ/অনুভূতির ধাপটাকে খুব ভালো করে দেখা দরকার। কারণ সচরাচর আমরা নিজেদের আবেগ-অনুভূতিকে জায়গা দিতে চাই না। কিš‘ আপনি যদি চিন্তা থেকে আবেগ-অনুভূতিতে পৌঁছাতে না পারেন তাহলে আচরনের বা শারীরিক লক্ষণের আসল কারণগুলো বুঝতেই পারবেন না। আবেগ গুলো ধরতে পারলে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে পারলে, নিজে অনুভূতি স¤পর্কে সচেতন হলে আপনি অনেক সহজে মনের কথা বলতে পারবেন, চাপের মোকাবিলা করতে পারবেন। মনের মধ্যে ভয় থাকলে আগে সেটা বুঝন, স্বীকার করুন যে হ্যাঁ, রাগ/ দুঃখ/ ভয় হতাশা হয়েছে, তবে তো তার মোকাবেলা করবেন। যদি ভাবতে থাকেন যে এই পরি¯ি’তিতে ভয় পাওয়াটা কাপুরুষতার লক্ষণ, অতএব আমি মোটেই ভয় পাইনি, আমার আচরণ ভয় জনিতনয় আমার বুক ঢিপঢিপ করছেনা, হাঁটু কাঁপছে না হাত-পা ঘামছে না তাহলে তো গোড়ায় গলদ হয়ে যাবে, তাই না ?
একটা অসুবিধা অনেক সময় হয়, অনুভূতি টা বুঝতে পারলেও তার নাম জানেন না বলে বা সংজ্ঞা জানেন না বলে সেটা যে ঠিক কি, তা প্রকাশ করে বলতে পারেন না। এটা আপনার ক্ষেত্রে হতে পারে । চেষ্টা করবেন একটু সময় দিয়ে ভাবতে,সঠিক অনুভূতির নামটা না জানলেও, কাছাকাছি অন্যকিছু দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করতে পারেন, বা বর্ণনা দিয়ে, যে ঠিক কি কি হ”েছ মনের মধ্যে।
নিঃস্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়ামঃ
চাপ কমানোর একটা ব্যায়াম হ”েছ- নিঃস্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম। প্রথমে আপনি চোখ বুজে নিঃশ্বাস নিন, এরপর এক হাত পেটের ওপর আর এক হাত বুকের ওপর রেখে অনুভব করে দেখুন কোথা থেকে নিঃশ্বাস /প্রশ্বাসের ধারা বইছে, পেট থেকে না বুক থেকে। চাপ কমানোর জন্য গভীর নিঃশ্বাস/প্রশ্বাসের প্রয়োজন হয় যা আসার কথা পেটের গভীর থেকে, বুক থেকে নয়। চেষ্টা করুন যাতে গভীর নিঃশ্বাস পেট থেকে উঠে আসে ধীরে ধীরে, তাতে আপনার মন শান্ত হয়ে যাবে, চাপের বোধ কমতে থাকবে।
‘মূল চাপের কেন্দ্র’-খুঁজে বের করাঃ
‘মূল চাপের কেন্দ্র’ হিসাবে আপনি যা খুঁজে পেয়েছেন সেখানকার কোন একটা ঘটনা /পরি¯ি’তির কথা লিখুন। তারপর চিন্তা- আবেগ/অনুভূতি- আচরণ- শারীরিক লক্ষণ- চাহিদা এসবের বিশ্লেষণ করুন। তারপর লিখুন, সেই ঘটনা /পরি¯ি’তির মোকাবিলা কীভাবে করেছিলেন বা করেননি। আর এরপর, আজকের জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনি ভেবে দেখুন যে, আর কোন কোন পদ্ধতিতে আপনি ঐ চাপের অব¯’ার মোকাবিলা করতে পারতেন।
এই একইভাবে ‘কম চাপের ক্ষেত্র’ বেছে নিয়ে একইভাবে লিখুন। ডায়েরির এই দুটি অংশকে পাশাপাশি রাখলেই দেখা যাবে যে কোন পরি¯ি’তিতে আপনার যুক্তি, বুদ্ধি, চিন্তা, আবেগ একেবারে মুখ থুবরে পড়েছে এবং কেনই বা কোন কোন ক্ষেত্রে এগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে। আপনি এইভাবে চাপ মোকাবিলার জন্য আপনার মনের মধ্যে যে শক্তি আছে সেগুলো চিনে নিতে পারেন, যে দুর্বলতা আছে সেগুলোকেও বুঝে নিতে পারেনে।
শরীরের চাপ খোঁজাঃ
এরপরের এক্সারসাইজ হলো, শরীরের চাপ খোঁজা। চোখ বন্ধ করে বসুন এবং খুব আস্তে আস্তে এক এক করে নিজের শরীরের এক একটা অংশ অনুভব করে দেখুন যে, কোথায় কোথায় চাপ বোধ হ”েছ। যেখানে চাপ খুঁজে পাবেন সেই জায়গাটিকে প্রথমে আরো চাপ দিন যাতে আপনি নিজে চাপটা ভালোভাবেই অনুভব করতে পারেন। শরীরের ওপর নিজেই চাপ দিয়ে দেখুন, আর সেইসঙ্গে মনে মনে বলুন যে- আমি নিজের শরীরের ‘এই’ অংশের উপর চাপ দি”িছ, নিজেকে কষ্ট দি”িছ। মনের ওপর চাপ পড়লে শরীরের যেমন তার প্রতিফলন হয়, তেমনি শরীরের কোন অংশে চাপ থাকলে, যা কিনা কোথা থেকে কেন তৈরি হয়েছে তা আমরা জানিই না হয়তো, মনের ওপর উল্টো চাপ তৈরি করতে পারে। তাই মাঝে মাঝে শরীরের নানান অংশের চাপ স¤পর্কে নিজেকে সচেতন করা দরকার, শরীরকে চাপমুক্ত করা দরকার।
শিথিলায়নঃ
“আমরা এতক্ষণ দেখলাম যে, কঠিন পরিস্থিতিকে সামলে উঠার জন্য নিজের পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে, এবং এটি আমাদের মনোসামাজিক ভাবে ভাল থাকার জন্য খুবই প্রয়োজন। এর মধ্যে আমরা কিছু উপায়ও চিহ্নিত করেছি, যেগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের বর্তমান পরি¯ি’তিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে ভাল থাকতে পারি। আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি যে, কঠিন পরি¯ি’তিতে এগুলো মনে রাখাটাও খুব সহজ নয়।”
“আমরা এবার নিজের পরিচর্যার একটি পদ্ধতি হিসেবে শিথিলকরণের একটি পদ্ধতি অনুশিলন করবঃ
– একটু জায়গা নিয়ে হেলান দিয়ে বসি এবং
– আসুন আমরা শ্বাসগ্রহণ থেকে শুরু করি, নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণকরব এবং ধীরে ধীরে মুখ বা নাক দিয়ে শ্বাসত্যাগ করি।
– লম্বা শ্বাসগ্রহণ করি (স্বল্প বিরতি), ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করি…
– এভাবে কয়েকবার শ্বাসগ্রহণ ও ত্যাগ করি (স্বল্প বিরতি)
– আমাদের শরীর শান্ত ও শিথিল না হওয়া পর্যন্ত এটি করি…
– শ্বাসগ্রহণ ও ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করি… (স্বল্প বিরতি )
– আমরা এবার অনেক শান্ত অনুভব করছি, এখন আমরা ধীরে ধীরে আমাদের চোখ বন্ধ করব তবে কোন অস্বস্তি লাগলে চোখ খোলা রেখে কোন একটি নির্দিষ্ট বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকবো
– এবার কল্পনা করি, আমার পায়ের পাতার চারপাশে সবুজ ঘাস… (বিরতি)
– খুব নরম ও সুন্দর ঘাস (স্বল্প বিরতি),ঘাসগুলো ঠিক আমার পছন্দের রংয়ের…চাইলেপছন্দের রং করতেও পারি (লম্বা বিরতি)
– এবং এটি খুব নরম ও কোমল, সুন্দর ও আরামদায়ক (বিরতি)
– আমার পায়ের পাতায় এটি আরামের অনুভুতি দিচ্ছে… (স্বল্প বিরতি)
– ধীরে ধীরে আরামের অনুভুতি পায়ের পেশীর উঠে আসছে…পেশিকে আরাম দিচ্ছে (স্বল্প বিরতি)
– এবার এটি হাটুর কাছে উঠে আসছে… (বিরতি)
– এরপর নিতম্বের কাছে… (স্বল্প বিরতি)
– এরপর কোমরের কাছে… (স্বল্প বিরতি)
– এবং আমাদের অনেক আরাম লাগছে… (লম্বা বিরতি)
– এবার এই আরামের অনুভুতি হাত ও বাহু দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠছে… (স্বল্প বিরতি)
– ধীরে ধীরে কাধ ও গলা স্পর্শ করছে… (স্বল্প বিরতি)
– এবং আমরা ধীরে ধীরে শ্বাসগ্রহণ করছি… (স্বল্প বিরতি) আমরা ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করছি …(স্বল্প বিরতি)
– এবং আমাদের অনেক আরাম ও শান্তি লাগছে… (লম্বা বিরতি)
– এবার এই আরামদায়ক অনুভুতি আমার মুখমণ্ডলকে স্পর্শ করে উপরে উঠছে… (স্বল্প বিরতি)
– এখন আমাদের সম্পুর্ন শরীর আরামের অনুভ’তির মাঝে…শুধুমাত্র নাক ও মুখ ব্যতিত, যা দিয়ে আমরা লম্বা শ্বাসগ্রহণ করছি ও ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করছি … (স্বল্প বিরতি)
– এবং আমাদের অনেক আরামলাগছে… (লম্বা বিরতি)
– এবং আমাদের অনেক শান্তি লাগছে… (লম্বা বিরতি)
– আমরা লম্বা শ্বাসগ্রহণ করছি ও ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করছি … (লম্বা বিরতি)
– এবার ঘাসগুলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে … (বিরতি)
– তবে এখনও আমাদের অনেক আরাম লাগছে… (লম্বা বিরতি)
– এবং আমাদের অনেক শান্তি লাগছে… (লম্বা বিরতি)
– এবার আমরা ৫ বার লম্বা শ্বাসগ্রহণ করব… (স্বল্প বিরতি)
– ৫ লম্বা শ্বাস নিই… ধীরে ধীরে ছাড়ি… (স্বল্প বিরতি)
– ৪ লম্বা শ্বাস নিই… ধীরে ধীরে ছাড়ি… (স্বল্প বিরতি)
– ৩ লম্বা শ্বাস নিই… ধীরে ধীরে ছাড়ি… (স্বল্প বিরতি)
– ২ লম্বা শ্বাস নিই… ধীরে ধীরে ছাড়ি… (স্বল্প বিরতি)
– ১ লম্বা শ্বাস নিই… ধীরে ধীরে ছাড়ি… (স্বল্প বিরতি)
এবং যখন প্রস্তুত হব খুব ধীরে চোখ খুলব
“আমরা জানলাম যে- কঠিন পরিস্থিতিকে সামলে উঠার জন্য নিজের পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা আজকে যা যা করলাম বা শিখলাম তা আরেকবার মনে করার চেষ্টা করি। এখন আমরা সবাই আমাদের চোখ বন্ধ করব। আমরা দুই মিনিট চোখ বন্ধ করে আস্তে আস্তে নিশ্বাস নিব। আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আজ যা কিছু শিখলাম- তা একে একে ভাববো। আপনি চোখ বন্ধ রেখে চিন্তা করবেন এবং ভাববেন। এখন চোখ আস্তে আস্তে বন্ধ করুন এবং মনে করার চেষ্টা করুন কী কী শিখেছেন।”[/vc_column_text][/vc_column][/vc_row]